বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রমাণ করে দিয়েছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দল নয়, গণহত্যাকারী একটি সিন্ডিকেট। তারা আমাদের রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করেছিল, আল্লাহ তাদের মানুষের মনের মধ্যে নিষিদ্ধ করেছে। গণহত্যাকারী এ দল বাংলাদেশের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আগে গণহত্যার বিচার হোক ও ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের ইনসাফ পাক। তারপর তারাই রায় দিবে আওয়ামী লীগ এ দেশে রাজনীতি করতে পারে কিনা।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
’২৪-এর অভ্যুত্থান প্রসঙ্গ টেনে শফিকুর রহমান বলেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। নিহত ও আহতের সংখ্যা ৩৬ হাজারেরও বেশি হবে। দু-চোখ হারিয়ে যারা অন্ধ হয়েছেন তাদের সংখ্যা ৫০০ হবে। হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছেন ২৫০ এর অধিক। এক চোখ হারিয়েছেন ৭০০ জন। এ সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাব, জাতীয় বীর হিসেবে তাদের মর্যাদা দেওয়ার জন্য।
তিনি আরও বলেন, এত ঘটনা কেন ঘটল। তারা কথার ও অর্থের রাক্ষস। তারা দাম্ভিক ও অহংকারী ছিল। মানুষ ও বিভিন্ন দলকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে। মানুষ বলে তারা কাউকে সম্মান করত না। দুনিয়ার কিছুটা পাওনা তারা পেয়েছেন। কিন্তু পাওনা তাদের বাকি আছে। যেহেতু তারা গণহত্যাকারী নেত্রী (শেখ হাসিনা) এবং দল, সেহেতু আমরা চাই গণহত্যাকারী দল এবং প্রত্যেকটি ব্যক্তির বিচার হোক। দেশের প্রচলিত আইনে ন্যায়বিচার হোক।
বিদেশে আত্মগোপনকারীদের উদ্দেশ্যে জামায়াতের আমির বলেন, আপনারা যারা বিদেশে আছেন, যদি দেশকে ভালোবাসেন তাহলে আপনারা চলে আসেন। অসুবিধা নেই। আপনাদের আমলে তো আমরা দফায় দফায় জেলে গিয়েছি, জেলে থেকেছি। আপনারা আসুন, দেখুন আমাদের কীভাবে জেলে রেখেছিলেন। এখন না হয় আপনারা একটু দেখার সুযোগ পেলেন। আপনারা মিথ্যা মামলায় সাজানো সাক্ষী দিয়ে আদালতে আমাদের নেতাদের ফাঁসি দিয়েছেন, খুন করেছেন। আপনারা প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে খুন করেছেন। যা দেশবাসী সাক্ষী, বিশ্ববাসী সাক্ষী।
তিনি বলেন, আপনারা তো খুন করতে করতে এমন করেছেন, লাশ গুম করতে তাড়াহুড়ো করে ট্রাকের ওপর একটার পর একটা ছুড়ে মেরেছেন। প্রত্যেকটা লাশে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। কোথায় ছিল আপনাদের মানবিক সত্ত্বাটুকু, কীভাবে আপনারা এ গণহত্যা সম্পন্ন করলেন। রাজনীতির নামে যদি গণহত্যা হয়, তবে এমন রাজনীতি জনগণ বরদাস্ত করবে না। রাজনীতির নামে যদি জনকল্যাণ হয় তাহলে জনগণ যাকে পছন্দ করবে তাকে বরণ করে নিবে। আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে তারা কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বরং গণহত্যাকারী একটি সিন্ডিকেট।
জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, তারা আমাদের কোরআনের পাখিদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে, আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছে। তাদের রাজনৈতিক আত্মহত্যার চারদিন আগে আমাদের নিষিদ্ধ করেছে। যারা আমাদের পহেলা আগস্ট নিষিদ্ধ করলেন, আল্লাহ তাদের মানুষের মনের মধ্যে নিষিদ্ধ করেছেন। আমরা বলি যে, আন্দোলনের মূল কৃতিত্ব আল্লাহর হাতে। তিনি জাতির সন্তানদের বুক সোজা করে দাঁড়াতে হিম্মত দিয়েছেন। আল্লাহর কাছে কবুল হয়েছে তাই ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বরিশালের সঙ্গে ভোলার সড়ক যোগাযোগে সেতু নির্মাণের দাবি অযৌক্তিক নয়। আমার কাছে মনে হয় এটি বরিশাল এবং ভোলাবাসীর মৌলিক দাবি। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ভোলাকে যুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে ভোলার গ্যাস দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে সরবরাহ করা হোক।
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা বলছি না তারা বরিশালের জন্য কিছু করেনি। আমরা বলতে চাই, যেই বিষয়গুলো সমাধান হয়নি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেগুলো সমাধান করতে হবে। আমরা চাই তারা শুরু করুক। পরবর্তী যে সরকার আসবে সেই সরকার বাকিটা শেষ করবে। কিন্তু শুরুটা আপনাদের মাধ্যমে হোক। ভোলাকে উন্নত জেলা হিসেবে দেখতে চাই, বরিশাল বিভাগকে উন্নত বিভাগ হিসেবে দেখতে চাই। আমরা চাই নদী-নদী-খালের সঙ্গে আরেকটি থালা যুক্ত হোক। সেই থালাটি হবে সোনার থালা।
বরিশাল মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহা. বাবরের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও বরিশাল জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার। এ ছাড়া বরিশাল জেলা ও মহানগর, উপজেলা, থানাসহ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বিভিন্ন শাখার নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এর আগে দুপুর ২টায় বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে শুরু হয় জামায়াতে ইসলামী বরিশাল জেলা ও মহানগরের কর্মী সম্মেলন। সম্মেলন শুরুর আগেই বেলা ১১টা থেকে জেলা এবং মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থলে জড়ো হন। দুপুর ২টায় কেন্দ্রীয় ঈদগাহসহ পার্শ্ববর্তী ভাটারখাল ডিসি সড়কের মুখ থেকে চাঁদমারী এবং ক্লাব রোড পর্যন্ত এলাকায় নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ঈদগাহের সম্মেলন শেষে বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নারী জামায়াত কর্মী সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন আমিরে জামায়াতে শফিকুর রহমান। সেখানে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন তিনি।
এর আগে দুপুরে চরমোনাই মাদ্রাসা মসজিদে যোহরের নামাজ আদায় করেন আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান। পরে সেখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সেঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেখানে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে জামায়াত-ইসলামী আন্দোলনের ঐক্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা করেন।
মন্তব্য করুন