ভয়াবহ বন্যার পর লাগানো বীজ ধানের চারায় ফসল নেই। হতাশায় কৃষকরা ধানের গাছগুলো কেটে ফেলছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে শত শত একর জমিতে কাঁচা ধানের গাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে। একেবারে সবুজ কাঁচা ধান। যেগুলো পাকতে আরও ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেতে শুধু গাছ আছে, ধান নেই। ধানের শীষ বের হচ্ছে না অথবা বের হলেও ধান ছিটা। ক্ষেতের আইলে বসে এমনটি বলেছিলেন কৃষক আনোয়ার (৬০) এবং কৃষক মতিউর (৫৫)।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে অনেক এলাকার মাঠজুড়ে রয়েছে এমন করুণ দৃশ্য। ধানের এমন অবস্থায় কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। কৃষকরা বাধ্য হয়ে কাঁচা সবুজ ধান কেটে গরুর ঘাস হিসেবে ব্যবহার করছে।
কমলনগরের তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নে আনোয়ার মিয়া বলেন, বন্যার কারণে পরপর ৫ বার বীজ লাগিয়েও চারাগাছ নষ্ট হয়ে যায়। ষষ্ঠবার বাজার থেকে ধানের চারা কিনে জমিতে লাগিয়েছি। মনে মনে ভাবছিলেন হয়তো ভালো ফলন পাবো। অক্টোবরেই জমি শুকিয়ে গিয়েছিল। ধানে কয়েক বার সেচ দিয়েছিলাম। কিন্তু জানুয়ারির ১৫ তারিখেও গাছ থেকে শীষ বের হচ্ছে না। ধান পাব বলে আর আশা নেই। তাই এখন সবুজ ধান গাছ কেটে ফেলছি।
তিনি আরও বলেন, ৪০ শতক জমিতে সব মিলে তার প্রায় ১৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। হাতে কোনো কাজও নেই। তাই দুশ্চিন্তায় আছি।
কমলনগরের চর কাদিরা গ্রামের কৃষক মতিউর ও কামাল। পাশাপাশি জমিতে তারা ৪ বারের পর ৫ম বার বীজ লাগিয়েছেন। কিন্তু তাদের সে কষ্টের ধানে কোনো ফলন নেই। তারা দুজনই ঘাস হিসেবে সবুজ গাছ কেটে গরুকে খাইয়ে ফেলছেন।
মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কমলনগর উপজেলার শতশত একর জমিতে এখন এমন অবস্থা রয়েছে। এতে হতাশ হয়ে গেছে কৃষকরা। অনেক কৃষক সবুজ ধান গরুর ঘাস হিসেবে বিক্রি করে ফেলছে। অনেকে ধান গাছ কেটে নতুন করে সয়াবিন চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, ২০২৪ এর আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগরে যেসব এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেগুলোর মধ্যে গ্রামের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ কৃষক ও শ্রমিক। আয়ের আর বিকল্প উপায় না থাকায় তারা সবাই চাষাবাদ করেন। বন্যার পর বীজ না থাকা সত্ত্বেও তার দূরদূরান্ত থেকে বীজ সংগ্রহ করেছিলেন ফলনের আশায় । কিন্তু বর্তমানে ফলন না পেয়ে তারা আবারও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
কিন্তু এবার ধান নিয়ে কৃষকদের এমন অবস্থা কেন হলো? তা জানতে চেয়েছিলাম কয়েকজন কৃষক থেকে। চর কাদিরা গ্রামের কৃষক আবুল কালাম, কৃষক তুহিন জানান, কৃষকদের নেশা চাষাবাদ করা। কিন্তু গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যার পর তারা ধান লাগাতে পারেনি। কৃষকরা কেউ কেউ ৫-৬ বার বীজতলা তৈরি করে কেউ ব্যর্থ হয় কেউ চারা উৎপাদনে সফল হয়। কৃষকরা প্রথমে নিজের বীজ পরে বাজারের বীজ এবং অনেকে সরকারি প্রণোদনার বীজে ধান লাগিয়ে ছিল। কিন্তু সে ধানের গাছে ফলন আসছে না। কেউ কেউ মনে করছে বিলম্বে ধান লাগানো হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছে, ধানের জাতে গরমিল হয়েছে।
কৃষকদের এমন পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মকর্তা মো. শাহিন রানা বলেন, বন্যার পর কৃষক একাধিকবার বীজ লাগিয়েছে। তবে ফলন ভালো হয়নি। অনেক এলাকায় কাঁচা ধানের গাছ কেটে গরুর মহিষের খাবার তৈরি করছে।
সুনিদির্ষ্ট তথ্য দেওয়ার পর তিনি বলেন, আমন ধান আলোক সংবেদনশীল উদ্ভিদ। মূলত বিলম্বে লাগানোর কারণেই এমন সমস্যা হয়েছে। অন্যদিকে প্রণোদনার ব্রিধান-৭৫ জাতে কোনো ফলন আসেনি বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
মন্তব্য করুন