তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানিক হাওলাদার নামে এক যুবদল নেতাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে । এ হত্যাকাণ্ড তার নাবালক দুই সন্তানের সামনেই করা হয়। নিহত মানিক খুলনা নগরীর ২১ নং ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতি ছিলেন।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা মহানগরীর পুরাতন রেলস্টেশন রোড রেলওয়ে মসজিদের পেছনে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেশী মেহেদীসহ কয়েকজন দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় হত্যায় অংশ নেওয়া মেহেদীর ভাই সাজ্জাদ ও বোন তুলিকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত মানিক রেলওয়ে হাসপাতাল রোডের মনছুর হাওলাদারের ছেলে।
হাসপাতাল ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে ওএমএস এর চাল বিতরণে লাইন দেওয়াকে কেন্দ্র করে তুলি নামে এক নারীর সঙ্গে মানিকের তর্ক হয়। তুলি বাড়িতে এসে ভাই মানিক ও সাজ্জাদসহ কয়েকজনকে নিয়ে মানিকের উপর হামলা চালায়। এতে মানিকের বুকের মাঝখানে এক জায়গায় এবং পেটের বা'পাশে এক জায়গায় ছুরিকাঘাত করে জখম করে। স্থানীয় লোকজন তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। ঢাকায় নেওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলে খুমেক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মেহেদীর ঘরে হামলা চালায় এবং কয়েকটি ফার্নিচার ঘরের বাইরে বের করে আগুন লাগিয়ে দেয়।
মানিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরাতন রেলস্টেশন রোড রেলওয়ে মসজিদের পাশে মানিকের বাড়িতে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় মানিকের ৪ বছরের ছেলে ওসমান ভয়ে কাঁচুমাচু করছে। সেখানে থাকা মানিকের স্ত্রী পারভীনা বেগম ও তার ১০ বছরের মেয়ে মরিয়ম কিছুক্ষণ পরপর হাউমাউ করে কেঁদে উঠছে। প্রতিবেশীরা বলছে এই নাবালক বাচ্চা দুইটার সামনেই মানিককে হত্যা করল। বাবাকে কারা কীভাবে মেরেছে জিজ্ঞাসা করতে ৪ বছরের নাবালক শিশু অকপটে বলছে- ‘আমার আব্বাকে বুকে চাকু মারছে, আমার আব্বা মরে গেছে।’ তবে কিছুটা বুঝতে পারছে ১০ বছরের মেয়ে মরিয়ম, বারবার বলে উঠছে আমার আব্বাকে মেরে ফেলেছে চাকু দিয়ে মেরে ফেলেছে। আমার চোখের সামনে।
মানিকের স্ত্রী পারভীনা বেগম বলেন, আমার পা কেটে যাওয়ায় টিসিবির চাল উঠাতে যেতে পারিনি আমি। আমার স্বামী (মানিক) গিয়েছিলো ট্রাকের কাছে। সেখানে আমার স্বামীর সঙ্গে কথাকাটাকাটি করে তুলি। সেখানে আমার এক দফা হামলা করে তুলি ও কয়েকজন । আমার স্বামী চাল নিয়ে বাসায় আসলে সেখানে তাকে তুলি ও তার ভাই মেহেদী ও সাজ্জাদ ছুড়ি নিয়ে এসে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। আমার স্বামী আমাকে বলেছে তোমার পা কাটা তুমি বের হইও না। আমি হাসপাতালে যাচ্ছি। কিন্তু আর ফিরে আসলো না।
এলাকায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মেহেদী ও সাজ্জাদ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্য করে এই ঘাট এলাকায় মাদক বিক্রির সিন্ডিকেট পরিচালনা করতো। গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকলেও খুলনা সদর থানা বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় এলাকায় এসে আগের থেকে আরও বেপরোয়া হয় মেহেদী ও সাজ্জাদ।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ আহসান হাবীব কালবেলাকে বলেন, নগরীর পুরাতন রেলওয়ে রোড এলাকায় ২১নং ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতি মানিক হাওলাদারকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ২ জনকে আটক করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন