পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান গাজীর বিরুদ্ধে ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির ১২ নারীর বরাদ্দের ৬৬০ কেজি চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে শাহজাহান গাজী বলেছেন, বরাদ্দের চাল ‘ইঁদুর-কাকপক্ষী খেয়ে ফেলেছে’।
এদিকে লিখিত অভিযোগের পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, উত্তর কেশবপুর গ্রামের নাসির হাওলাদারের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার ও একই গ্রামের মো. রাসেলের স্ত্রী মোসা. সীমা বেগম নামে দুই নারী চাল না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে আলাদাভাবে গত ১২ জানুয়ারি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
অভিযোগকারী শাহিনুর আক্তার জানান, ভিডব্লিউবি কর্মসূচির তালিকাভুক্ত (কার্ড নম্বর-২১) হয়ে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পেয়েছেন তিনি। কিন্তু গত বছরের (২০২৪ সালের) এপ্রিল ও ডিসেম্বর মাসের ৬০ কেজি চাল দেওয়া হয়নি তাকে। চালের জন্য তিনি প্যানেল চেয়ারম্যান শাহজাহান গাজীর কাছে অভিযোগ করতে গেলে তিনি ‘চাল ইঁদুর-কাকপক্ষী খেয়ে ফেলেছে’ জানান।
আরেক অভিযোগকারী সীমা বেগম জানান, কর্মসূচির আওতায় ২০২৪ সালের এপ্রিল, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর এ চার মাসের ১২০ কেজি চাল পাননি তিনিও। উপরন্তু প্যানেল চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. শহিদুল ইসলাম চাল না দিয়ে জোরপূর্বক তার ভিডব্লিউবি কার্ডে টিপসই দিতে বাধ্য করে। একপর্যায়ে ভিডব্লিউবি কার্ড নিতে চাইলে জোর করে কার্ড নিয়ে চলে আসেন তিনি। পরে এ বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে গেলে তাকেও একই ধরনের কথা বলেন ওই প্যানেল চেয়ারম্যান শাহজাহান গাজী।
সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় কেশবপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের (উত্তর কেশবপুর) শায়লা আক্তার, হ্যাপী বেগম, মোসা. হোসনেয়ারা ও হাসি বেগমসহ ১২ নারীর ৬৬০ কেজি চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্যানেল চেয়ারম্যান শাহজাহানের বিরুদ্ধে।
ওই ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ওয়ার্ডে ২২ কার্ডধারী নারী ভিডব্লিউবি কর্মসূচির চাল পান। প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত চার মাসের বরাদ্দের চাল নয়-ছয় করেন শাহজাহান গাজী। তিনি জেলেদের চাল, বকনা বাছুর বিতরণ, কৃষকের সার-বীজ ও কীটনাশক, টিসিবির পণ্যসহ নানা বিষয়ে ব্যাপক অনিয়ম করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবাদ করলে গত ৮ জানুয়ারি আমার ওপর চড়াও হয় শাহজাহান গাজীর লোকজন। আমিও ইউএনও কার্যালয়ে অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান গাজী রোববার কালবেলাকে বলেন,
আমার ওপেন হার্ট সার্জারি করা। আমি ওই বরাদ্দের চালের অথরাইজড দিয়েছিলাম ২নং প্যানেল চেয়ারম্যান ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শহীদ শিকদারকে। তিনি কৃষি অফিসের কর্মকর্তা মো. রেদোয়ান সাহেবের উপস্থিতিতে চাল বিতরণ করেন। আমাদের গোডাউন নেই। চালের বস্তা রাখার নিরাপদ জায়গাও নেই। পরিষদ কার্যালয়ের দোতলায় বস্তা রাখা হয়। সেখানকার দরজা-জানালা নেই বললেই চলে। ইঁদুর-কাকপক্ষী বস্তা কেটে ফেলায় অপচয় হয়। ওইদিন সবার সামনেই কিছু পরিমাণে চাল কম দেওয়ার কথা জেনেছি। এর ২০-২৫ দিন পরে দুই সুবিধাভোগী নারী দুই বস্তা চাল কম পাওয়ার অভিযোগ জানালে আমি ‘ইঁদুর-কাকপক্ষী খেয়ে ফেলেছে’ তাই কম দেওয়া হয়েছে বলে জানাই। আমার ইমেজ ক্ষুণ্ন করতে এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউএনও মো. আমিনুল ইসলাম রোববার কালবেলাকে বলেন, ‘আমি কয়েক দিন আগে এখানে যোগদান করেছি। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন