জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমাদের সন্তানরা এখনো স্লোগান দিচ্ছে, আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ। তাই চাঁদাবাজ, ঘুষ বাণিজ্যকারী, মামলা বাণিজ্যকারী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী জেলা ও মহানগর আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের এ লড়াই চলবে ইনশাআল্লাহ। যতদিন না ইনসাফ এ জমিনে কায়েম না হয় ততদিন। আর ইনসাফ কায়েমের নিশ্চয়তা একমাত্র আল কুরআন দিতে পারে, আর কিছুই দিতে পারে না। এ কুরআনের শাসন সব ধর্মের, সব দলের, সব বর্ণের মানুষের জন্য একমাত্র ইজ্জতের নিশ্চয়তা। কুরআনের শাসন কায়েমের মধ্য দিয়ে একটি মানবিক বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই, দুর্নীতি এবং দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। অন্য ধর্মের ভাইদের আমরা ভাই হিসেবে দেখি।
তিনি আরও বলেন, আমরা মানুষকে ঘৃণা করি না, হিংসা করি না। আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান করি। মানুষের দুঃখ-কষ্টে সবার আগে সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করি। অফিস-আদালতে যারা ঘুষবাণিজ্য করেন, আবার মামলাবাণিজ্যও অনেকে করেন, তাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক অনুরোধ, কাজগুলো করবেন না। আমাদের শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে।
জামায়াতের আমির বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার আলেম-ওলামাসহ বিভিন্ন মানুষের ওপর তাণ্ডব চালিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর দুজন আমিরসহ একজন সেক্রেটারি জেনারেল, তিনজন নায়েবে আমির, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও একজন কার্যনির্বাহী সদস্যসহ মোট ১১ দায়িত্বশীল নেতাকে কেড়ে নিয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ যারাই করেছে শত শত কর্মীকে তারা হত্যা করেছে, অসংখ্য ভাই-বোনকে গুম করেছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে পঙ্গু করেছে, আহত করেছে, তাদের চাকরি কেড়ে নিয়েছে।
শফিকুর রহমান বলেন, বহু নেতাকর্মীর ভিটেমাটি উচ্ছেদ ও ব্যবসা-বাণিজ্য তছনছ করেছে। কাউকে দেশেও থাকতে দেয়নি। হাজার মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করেছে। লাখো সহকর্মীদের জেলে নেওয়া হয়েছে। এতসব মানুষ কি কখনো চুরি করেছে? মানুষ হত্যা করেছে? গুপ্ত হত্যা করেছে? এসব কিছুই করেনি। স্বৈরাশাসকের কথা না মানায় তাদের ওপর এমন নির্যাতন করেছে।
উপস্থিত রাজশাহীবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর রাজশাহীতে কোনো চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, ঘুষবাণিজ্য আছে? যদি থেকে থাকে তবে আপনাদের কাছে অনুরোধ, আল্লাহর ওয়াস্তে এসব ছেড়ে দেন। শহীদদের স্মরণ করে জামায়াতের শীর্ষ এ নেতা বলেন, শহীদরা আমাদের জাতীয় সম্পদ, পরম সম্মানের পাত্র। যারা শহীদ হয়েছে, আমরা তাদের দলের, সবাই আমাদের দলের মানুষ। তারা জাতীয় সম্পদ, জাতীয় বীর, মাথার ওপরে শ্রদ্ধার সঙ্গে তুলে রাখতে চাই।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে পশুর মতো গুলি করেছিল। অনেক লাশ গুম করা হয়েছিল। লাশ পুড়িয়ে ছাই হয়ে গেছে। এখনো বহু জায়গায় গেলে তারা আমাদের কাছে তাদের সন্তানের খবর চায়।
রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির মাওলানা ড. কেরামত আলীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মো. সাহাবুদ্দিন, স্বাগত বক্তব্য দেন রাজশাহী জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল খালেক।
মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডলের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, পাবনা জেলা আমির আবু তালেব মণ্ডল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমির আবু জার গিফারি, নাটোর জেলা আমির ড. মীর নূরুল ইসলাম, নওগাঁ জেলা আমির খন্দকার মো. আব্দুর রাকীব, বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিশ রাজশাহী মহানগর সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ আবুল বাশার, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ রাজশাহীর আহ্বায়ক মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমী।
উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ সেলিম, সাংগঠনিক সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন সরকার, যুব বিভাগীয় সেক্রেটারি সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ইসলামী ছাত্রশিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি শামীম উদ্দিন, জেলা পূর্ব সভাপতি রুবেল আলী, জেলা পশ্চিমের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নওসাজ জামান, নগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাহববুল আহসান বুলবুল, শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশনের নগর সভাপতি অধ্যাপক আবদুস সামাদ, রাজশাহী জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নাজমুল হক, জেলার শ্রমিককল্যাণ সভাপতি অধ্যাপক কামরুজ্জামান, রাজশাহী বিভাগের উলামা সেক্রেটারি মাওলানা রুহুল আমিন, রাজশাহী জেলার মাদ্রাসাশিক্ষক পরিষদের সভাপতি মাওলানা এফএম ইসমাইল আলম।
এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জুলাই বিপ্লবের শহীদ সাকিব আনজুমের গর্বিত পিতা মাইনুল হক।
মন্তব্য করুন