রাষ্ট্রের বেশিরভাগ সংস্কার বাস্তবায়নের পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর নগরীর সিটি বাজার এলাকায় দলের জেলা ও মহানগর কার্যালয় উদ্বোধন শেষে তিনি এ দাবি জানান।
নুরুল হক নুর বলেন, ‘সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রস্তাবনা দিয়েছে। আমরা চাই তাদের প্রস্তাবনার আলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করবে। যার অধিকাংশ সংস্কার বাস্তবায়নের পরে তারা নির্বাচনের পথে হাঁটবে।’
তিনি বলেন, শুধু একটি নির্বাচনের জন্য এই গণঅভ্যুত্থান হয়নি, শুধু ভোটের জন্য এই গণঅভ্যুত্থান হয়নি। রাষ্ট্র পুনর্গঠন, সংস্কার ও মেরামতের মাধ্যমে একটি মানবিক, গণতান্ত্রিক ও জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য এই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। তাই জনাকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাষ্ট্র সংস্কার অনিবার্য হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের ৯০ পরবর্তী প্রজন্ম মনে করে, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে, পুরোনো বন্দোবস্ত জিইয়ে রেখে আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণ সম্ভব নয়। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে আমরা আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।
গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিতর্কিত নির্বাচনে যারা স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি হয়েছেন ইতোমধ্যে তাদের অপসারণ করা হয়েছে। তাদের অপসারণের ফলে স্থানীয় সরকারের কোনো প্রতিনিধি নেই। এ জন্য কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে এবং জনগণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় তাহলে এই নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও মডেল স্থানীয় সরকার নির্বাচন। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো যখন ক্ষমতায় গিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেয় তখন তাদের প্রভাব ও আধিপত্য থাকে। যার কারণে বিপক্ষ প্রার্থীদের ওপর আঘাত, হামলা ও মামলা করা হয়। গত পাঁচ দশকে দেশের রাজনীতিতে এসব দেখা গেছে। যেহেতু সংস্কার কমিশন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দেওয়ার প্রস্তাবনা দিয়েছে সেহেতু আমরা বলব, মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে সরকার সিদ্ধান্তে এলে সরকারের কার্যক্রমে গতি আসবে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আচরণ আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের মতো হয়ে উঠেছে। এটি মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি করছে। তারা বলছে এটি কোন বাংলাদেশ, এমন বাংলাদেশ বলবৎ থাকার জন্য কি আমরা জীবন দিয়েছি। জনগণের প্রতি সহনশীল থেকে নাগরিকদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা দলগুলোর দায়িত্ব। কোনো দলের হানাহানি, মারামারি, দখলদারি, চাঁদাবাজি এগুলো যদি চলে তাহলে সে দল জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যান হবে। এ ব্যাপারে সব দলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র শিগগিরই ঘোষণা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, গতকাল জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে মতামত জানতে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা সবাই বলেছি এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। দেশের মানুষ দল-মত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এ লড়াই করেছে এবং এই লড়াইয়ের পেছনে একটি বড় ধরনের প্রেক্ষাপট রয়েছে। বিশেষ করে গত দেড় দশকে আওয়ামী সরকারের দুঃশাসন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সংকটে ফেলেছিল। যার ফলে এই গণঅভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। এই গণঅভ্যুত্থানের আইনি, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিকসহ সব ধরনের বৈধতা দানের জন্য একটি ঘোষণাপত্র প্রয়োজন। প্রতিটি রাজনৈতিক দল নিজেদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামকে ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে মতামত দিয়েছে। খুব শিগগিরই সেটি ঘোষণা হবে।
এ সময় গণধিকার পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদ সদস্য হানিফ খান সজীব, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা মোন্নাফ, কার্যকরী সদস্য হাজি কামাল হোসাইনসহ জেলা ও মহানগর ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন