পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাছুর দেওয়ার কথা বলে ফটোসেশন, খিচুড়ি খাইয়ে বিদায় দিল এনজিও

পাবনায় হতদরিদ্র মহিলাদের হাতে গাভীর বাছুর দিয়ে ফটোসেশন এনজিওর। ছবি : সংগৃহীত।
পাবনায় হতদরিদ্র মহিলাদের হাতে গাভীর বাছুর দিয়ে ফটোসেশন এনজিওর। ছবি : সংগৃহীত।

প্রকল্পের নাম ‘হতদরিদ্রদের মাঝে উন্নত জাতের গাভীর বাছুর বিতরণ’। সুফলভোগী ১০ জন নারী। প্রকল্পটিতে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও বাছুর দেওয়ার কথা বলে ডেকে এনে প্রশিক্ষণের নামে শুধু ছবি তুলে খিচুড়ি খাইয়ে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। কাউকে কিছুই দেওয়া হয়নি। খামার থেকে ১০টি বাছুর এনে ছবি তোলা শেষে আবার খামারেই ফেরত পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, গরু না পাওয়ায় হতাশ ওইসব গরীব দুঃস্থ নারীরা। ফটোসেশনের দুই সপ্তাহ পার হলেও এখনও তাদের গাভীর বাছুর বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ প্রকল্পের টাকা পুরোটাই আত্মসাতের অপচেষ্টা করা হয়েছে। এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের রেলবাজার এলাকার মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা নামের এনজিওর নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলুর বিরুদ্ধে। বিষয়টি এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে সমালোচনা চলছে।

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের (বিএনএফ) আর্থিক সহায়তায় মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা এনজিওর উদ্যোগে ১০ জন দুস্থ মহিলাকে গাভীর বাছুর দেওয়ার কথা বলে রেলবাজারে নিয়ে আসা হয়। নিজের পরিচিত একটি খামার থেকে বাছুরগুলো গাড়িতে করে নিয়ে আসেন এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু। পরে এলাকার কিছু ব্যক্তিকে তার বাসভবন সংলগ্ন এনজিওর সামনে ডেকে এনে মহিলাদের দাঁড় করিয়ে গরু দেওয়ার ফটোসেশন করেন।

পরে ওই সকল দুস্থ মহিলাদের গাভীর বাছুর না দিয়ে খিচুড়ি ডিম খাইয়ে বিদায় করা হয়। এরপর বাছুরগুলো আবার একই গাড়িতে করে একই খামারে ফেরত দিয়ে আসা হয়। সেখানে উপস্থিত অনেকেই গরু প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী পরিচালক বাবলু জানান, পরে দেওয়া হবে।

কুবিরদিয়ার মাঠপাড়া গ্রামের আলম হোসেনের মেয়ে খুশি খাতুন স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর বাবার বাড়িতে এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন। অন্যের বাড়ি ও মাঠে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান।

তিনি বলেন, ‘ট্রেনিংয়ের কথা বলে আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। গাভীর বাছুর হাতে ধরিয়ে ছবি তোলে। কিন্তু কিছুই দেয়নি। বলছে এবার অন্য এলাকার লোকদের দেব, পরেরবার তুমি পাবে। পরে খিচুড়ি ডিম খাইয়ে বিদায় করছে। বাবলু কাকা ত্যাড়া মানুষ। বেশি কথা বললে আবার ধমক দেয়। তাই আর কিছু বলার সাহস পাইনি।’

খুশি আরও বলেন, ‘এর আগে একবার আমাকে একটা ছাগল দিয়েছিল বাবলু কাকা। তবে সেজন্য আমার কাছ থেকে নগদ ১৩০০ টাকা নিয়েছিল। এ ছাড়া পরবর্তীতে একটি গর্ভবতী ছাগলও নিয়েছিল।’

অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করে সংসার চালানো এক গৃহবধূ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ’আমাদের গাভী দেবার কথা বলে ট্রেনিং ডেকে নেয়। তারপর ট্রেনিং শেষে আমাদের বাছুর হাতে দিয়ে ছবি তুলে বিদায় করেছে। বলছে, এখন না, পরে দেবো। এখন পর্যন্ত পাইনি। ট্রেনিং এ আমরা বিভিন্ন গ্রামের দশজন মহিলা ছিলাম।’

যে গাড়িতে গরুর বাছুরগুলো আনা নেওয়া করেছে সেই গাড়ি চালক শুভ দাস বলেন, ‘ওইদিন আমার গাড়ি নিয়ে মথুরাপুর এলাকার একটি গরুর খামার থেকে দশটা বাছুর নিয়ে রেলবাজার বাবলু সাহেবের বাসার সামনে নেয়। পরে অনুষ্ঠান শেষে ওখান থেকে ওই বাছুরগুলো আবার মথুরাপুরের একই খামারে নামিয়ে দেওয়া হয়। এর বেশি কিছু জানা নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে অতিথি করে দাওয়াত দিয়েছিলেন, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে যেতে পারিনি। প্রকল্পটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা নেই। তবে আমার অফিসের প্রত্যয়ন দেওয়ার কথা রয়েছে। তিনি এটি নেওয়ার জন্য রিপোর্ট জমা দিয়েছেন কি না দেখে বলতে পারবো। তবে এরকম অভিযোগ থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সে অনুযায়ী প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে।’

বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের (বিএনএফ) উপ-মহাব্যবস্থাপক (কর্মসূচি) মোস্তফা কামাল ভূঞার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ প্রকল্পের আওতায় মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা নামের এনজিওকে আমরা ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। তার মধ্যে প্রথম অবস্থায় ৩ লাখ টাকা দিয়েছি। কার্যক্রম সন্তোষজনক রিপোর্ট পেলে তাকে বাকি ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট ইউএনও বা তার প্রতিনিধিকে একিভূত করে কাজ করার নির্দেশনা রয়েছে। কারণ প্রকল্প বাস্তবায়নের রিপোর্টে ইউএনওর প্রত্যয়ন লাগবে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এখনও তার রিপোর্ট হাতে পাইনি। আমরা বিষয়টি পর্যক্ষেণ করছি। প্রতিবেদন আসার পর যাচাই বাছাই করে দেখবো, কোনো অনিয়ম পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত এনজিও মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলুর মোবাইল ফোনে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে ও বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) একাধিক নাম্বার থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া না দেওয়ায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

খুলনা ও চিটাগংয়ের ফাইনালে ওঠার লড়াই আজ

নেইমার: এক অপূর্ণ সম্ভাবনার জন্মদিন

সোনালি অধ্যায়ের ৪০ বছরে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের জেসিনার পদ স্থগিত

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ৫ ঘণ্টা পর কেটে গেল কুয়াশা

ইজতেমায় আরও দুই মুসল্লির মৃত্যু

গাজা উপত্যকার দখল নেবে যুক্তরাষ্ট্র, বললেন ট্রাম্প

দুপুর ১২টায় দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত

সুইডেনের শিক্ষাকেন্দ্রে গুলি, নিহত ১১

সাংবাদিক মিরনকে কুপিয়ে বাসার সামনে ফেলে গেল দুর্বৃত্তরা

১০

চট্টগ্রামে ডিসি পার্কে ভাঙচুর

১১

মনে হচ্ছে বিবিসি বাংলা খুনি শেখ হাসিনার ভক্ত : প্রেস সচিব

১২

আজও বায়ুদূষণে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ঢাকা

১৩

বন্ধ ফটকের নিচ দিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকলেন কলেজছাত্রী, ভিডিও ভাইরাল

১৪

২০ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে হবে এবারের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা

১৫

সারসহ ট্রলি আটক, অভিযোগের তীর দুই বিএনপি নেতার দিকে

১৬

১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় আজ 

১৭

মেডিকেলে সুযোগ পেয়েও পড়াশোনা অনিশ্চিত শয়নের

১৮

৫ ফেব্রুয়ারি : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৯

আজ টিভিতে দেখা যাবে যেসব খেলা 

২০
X