কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধান্যদৌল বাজার এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে বসেছে মেলা। নানা বয়সি হাজারো মানুষের ঢলে জমে উঠেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য বহন করা এই পৌষসংক্রান্তির মেলা।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে এ মেলার আয়োজন করা হয়। প্রতি বছরই এ সময়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ মেলার আয়োজন করে থাকেন।
জানা গেছে, যুগ যুগ ধরে প্রতিবছরই এই সময়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় এই মেলা স্থানীয়দের মধ্যে মিলনমেলার সৃষ্টি করে। এই মেলা ঘিরে মেলার আশপাশের গ্রামগুলোতে আত্মীয়তাও বেড়ে যায়। সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি পায়। ঘরে ঘরে চলে উৎসবের আমেজ। মেলার জন্যে সারা বছর ধরে অপেক্ষায় থাকেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ও উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারাসহ মেলায় নানা পণ্যের পসরা সাজানো দোকানিরা। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলো থেকেও নানা বয়সের মানুষ এ মেলায় ছুটে আসেন। শীতকালীন এই মেলায় শিশুদের খেলনাসামগ্রী, নানা ধরনের পিঠা, কাঠের তৈরি নানা রকমের পণ্য, নানা জাতের মাছ, নানা রকমের প্রসাধনীর অসংখ্য স্টল নিয়ে বসেন দোকানিরা। সব মিলিয়ে মেলার পরিবেশটা মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেলার ভ্রাম্যমাণ রকমারি দোকানগুলোতে ভিড় করেছেন নানা বয়সের মানুষ। দূরদূরান্ত থেকে আসা ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা বিভিন্ন জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। মেলায় আসা বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ যার যার পছন্দমতো জিনিসপত্র কিনছেন। বিশেষ করে শিশুদের জন্য কেনা হচ্ছে নানা রকমের খেলনাসামগ্রী। নানা বয়সের নারীরা কিনছেন প্রসাধনী। পিঠার দোকানগুলোতে সাজানো হয়েছে নানা রকম গ্রামীণ ঐতিহ্যের পিঠা। কেউ কেউ মেলায় দাঁড়িয়েই খাচ্ছেন এসব পিঠা। ক্রেতা বিক্রেতা ছাড়াও মেলায় এসেছে নানা বয়সী দর্শনার্থী। এতে এ মেলা মানুষের উৎসবের প্রাণকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে।
পার্শ্ববর্তী বুড়িচং উপজেলা থেকে মেলা দেখতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, মেলার পাশের গ্রামে আমার নানাবাড়ি। প্রতিবছরই আমি এ মেলায় আসার চেষ্টা করি। আজকে বিকেলে এসেছি মেলায়। এ মেলার গুড়ের জিলিপি খেতে আমার খুব ভালো লাগে। মা ও বোনের জন্য কিছু কেনাকাটা করেছি।
উপজেলার চান্দলা এলাকা থেকে মেলায় এসেছেন সুরাইয়া আক্তার। তিনি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন তার শিশু দুই মেয়েকে। তিনি তাদের জন্য কিনেছেন রংবেরঙের ফানুস ও খেলনা। গৃহস্থালি কাজের জন্য কিনেছেন নানারকম পণ্য। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর থেকে আমি এ মেলায় আসছি। মেলার সবগুলো স্টল ঘুরে দেখেছি এবং কিছু না কিছু কিনে বাড়ি ফিরছি। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্যই বেশি কেনা হয়েছে।
মেলা থেকে ৭ বছর বয়সী ছেলের জন্য খেলনা বন্দুক কিনেছেন সঞ্জিত আচার্য। তিনি তার শিশুকন্যার জন্য কিনেছেন চুলের ফিতা, বেন্ট ও কিছু খেলনা। তিনি বলেন, প্রতিবছর আমাদের এলাকার এই মেলায় দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে। আমরা স্থানীয়রাও প্রতি বছর মেলায় খুব আনন্দ উৎসব করি। আমি মেলা থেকে আমার ছেলে মেয়ের জন্য কেনাকাটা করেছি। একসময় আমার বাবা আমাদের জন্য এ মেলা থেকে কেনাকাটা করতেন।
মেলায় ভ্রাম্যমাণ দোকানি বিল্লাল হোসেন বলেন, বিভিন্ন মেলায় ও ওরস মাহফিলে আমরা ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করি। যথাসময়ে মেলার স্থানে উপস্থিত হয়ে দোকান সাজিয়ে বসি। এই অঞ্চলের মেলাগুলোর মধ্যে এই পৌষসংক্রান্তির মেলা অন্যতম। অনেক মানুষের ঢল নামে এই মেলায়, বিক্রিও হয় বেশি।
মন্তব্য করুন