কখনো মসজিদ, কখনো রেলস্টেশন, কখনো দোকান আবার কখনো কলেজের ডিজিটাল এলইডি স্ক্রিন ভেসে উঠছে বিভিন্ন লেখা। কোথাও ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’; কোথাও ‘ছাত্রলীগ ভয়ংকর রূপে ফিরবে’৷ কোথাও লেখা উঠছে ‘শেখ হাসিনা আবার আসবে বীরের বেশে’।
গেল কিছুদিন দেশের আনাচকানাচে ঘটেছে এমন অসংখ্য ঘটনা। এতে অনেকেই বিব্রতবোধ করছেন। এমতাবস্থায় বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এলইডি স্ক্রিন বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে? সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলইডি স্ক্রিনের সঙ্গে যুক্ত ওয়াইফাই হ্যাক করেই বেশিরভাগ জায়গায় এমনটা ঘটানো হচ্ছে৷ এই হ্যাকিংয়ের জন্য ভারি কোনো যন্ত্রাংশেরও প্রয়োজন হচ্ছে না। হাতে থাকা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল দিয়ে সহজেই করা যাচ্ছে এসব কিছু। বেশিরভাগ এলইডি মুভিং বোর্ডের মাদারবোর্ডে পেন ড্রাইভের মাধ্যমে লেখা ইনপুট দেওয়ার পাশাপাশি ওয়াইফাই সুবিধাও থাকে। সেই ওয়াইফাইয়ের সঙ্গে খুব সহজেই মোবাইলের অ্যাপস কানেক্ট করা যায়।
এলইডি স্ক্রিন পরিচালনার জন্য বানানো মোবাইল অ্যাপস দিয়েই করা বাইরের কেউ সেসব এলইডির কন্ট্রোল নিজের হাতে নিয়ে নিচ্ছেন। এলইডি স্ক্রিনে সংযুক্ত থাকা ওয়াইফাই কানেকশনগুলোর ম্যানুফেকচারিংয়ের সময় থাকা কমন নাম এবং কমন পাসওয়ার্ডগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত থাকে। যে কারণে যে কেইউ সেই কমন পাসওয়ার্ড দিয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সহজে এসব কাজ করে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকছেন। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা কঠিন কাজ নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট ও ‘সাইবার ৭১’-এর পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাবের কালবেলাকে বলেন, লেখাগুলো মূলত এলইডির সঙ্গে থাকা ওয়াইফাই সিস্টেমকে কম্প্রোমাইজ করে ডাটা ইনপুট করার কারণেই আসে। এলইডি মুভিং বোর্ড বা বিলবোর্ডগুলোর কিছু অ্যাপস আছে, যেগুলো দিয়ে সেখানে কনটেন্ট আপলোড বা ডিসপ্লে করা যায়। সেসব অ্যাপগুলোর মিসইউজ করেই মূলত এ ঘটনাগুলো ঘটানো হয়। ডিজিটাল ফরেনসিকের মাধ্যমে খুব সহজে এসব কুচক্রী মহলকে চিহ্নিত করা সম্ভব।
কিছু সুনির্দিষ্ট উপায় অবলম্বন করলেই এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিদ সাইদুর রহমান রায়হান। তিনি বলেন, ওয়াইফাই কানেকশনে ট্রেডিশনাল পাসওয়ার্ডের পরিবর্তে শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের ব্যবহার এবং নিরাপত্তা ত্রুটিমুক্ত ডিভাইস ক্রয় করলে অনেকাংশেই নিরাপদ থাকবে এসব এলইডি বোর্ড। অপরিচিত ডিভাইস থেকে এলইডি বোর্ডের প্যানেলকে নিরাপদ রাখা গেলে বোর্ডে এসব অপ্রত্যাশিত লেখা আসার সুযোগ থাকবে না।
মন্তব্য করুন