ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় আড়াইশ বছর ধরে চলা ২৬৬তম ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলা দেখতে জনতার ঢল নেমেছিল। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে সাড়ে ৩টায় ফুলবাড়িয়ার লক্ষ্মীপুর বড়ইআটা এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় এ ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলা।
এতে অংশ নেন হাজার হাজার খেলোয়াড়। ঐতিহাসিক এ হুমগুটি খেলা দেখতে সেখানে মানুষের ঢল নামে। শুরুতে প্রশাসন খেলা নিষিদ্ধ করায় উপস্থিতি কম হয়। তবে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোক সমাগম বাড়তে থাকে।
সরেজমিনে খেলার মাঠে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষের সমাগম। বয়স্কদের চেয়ে উঠতি বয়সের তরুণদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি ছিল। খেলার মাঠের চারদিকে চলছিল হৈ-হুল্লোড়।
খেলায় ব্যবহার করা হয় ৪০ কেজি ওজনের পিতলের গুটি। হাজারো মানুষের ভিড়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায় ৪০ কেজি ওজনের পিতলের গুটি। এক গুটির দখল নিতে গ্রামের লাখো জনতার লড়াই। তবে রেফারিবিহীন এ খেলায় শুরু থেকে গুটি নিয়ে ব্যাপক কাড়াকাড়ি হলেও কোনও মারামারি হয় না। ঘণ্টায় ঘণ্টায় খেলার রং বদলায়।নিজেদের দখলে নিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয় খেলায়। খাল-বিল ও মাঠ-ঘাট পেরিয়ে গুটি গুম না হওয়া পর্যন্ত চলে খেলা।
উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নের কালিবাজাইল গ্রামে হুমগুটি টেনে-হিঁচড়ে কাড়াকাড়ি করে গুম করে ফেলায় ওই গ্রামের খেলোয়াড়রা বিজয়ী হন। মূলত গ্রামটির অবস্থান পূর্বদিকে হওয়ায় পূর্বকে পূব্বা বলা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল থেকেই ফুলবাড়ীয়া, মুক্তাগাছা, ত্রিশাল ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ঢাকঢোল ও বাদ্যযন্ত্রের তালে হাজারো খেলোয়াড় ও দর্শনার্থীরা আসতে থাকেন উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের দশমাইল এলাকায় খেলার মাঠে। বিকেল ৩টায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয় খেলার মাঠ। এ সময় হাজার হাজার খেলোয়াড় হুমগুটি লুকাতে টানাটানি করতে থাকেন। ধীরে ধীরে খেলার আশপাশে দর্শনার্থী আরও বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে জনসমাগম জনস্রোতে পরিণত হয়।
খেলা দেখতে আসা তৌহিদ নামে একজন বলেন, ছোট থেকেই এ খেলা দেখে আসছি, আগে এক সপ্তাহ ধরে চলত এ খেলা। এ বছর শুরুতে প্রশাসন খেলা নিষিদ্ধ করায় উপস্থিতি কম। তবুও হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুর রহমান বলেন, গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম খেলাধুলার মধ্যে হুমগুটি অন্যতম পুরোনো একটি খেলা। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে খেলাটি। গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাটি ধরে রাখতে হলে প্রতিবছর উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
জানা গেছে, মুক্তাগাছার জমিদার শশীকান্তের সঙ্গে ত্রিশালের হেমচন্দ্র রায় জমিদারের প্রজাদের মধ্যে তালুক-পরগনা জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধ নিস্পত্তির জন্য তালুক-পরগনা সীমান্তে এ খেলার আয়োজন করে। খেলার শর্ত ছিল যেদিকে গুটি যাবে তা হবে তালুক, পরাজিত অংশের নাম হবে পরগনা। সে থেকে প্রজাদের শক্তি পরীক্ষার জন্য জমিদারদের এ পাতানো খেলা চলছে বছরের পর বছর ধরে।
মন্তব্য করুন