ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠেছে উত্তরের জেলা রাজশাহী। জেলার বাগমারায় দেয়ালে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পর পর দুই দিন পোড়ানো হয়েছে মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র আল-কোরআন। এমন সব ঘটনার পর রাজশাহীর এক সমন্বয়ককে অভিনব কায়দায় ‘হত্যার হুমকি’ দেওয়া হয়েছে।
‘সমন্বয়ক, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। এমন কথা লিখে দেওয়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সংগঠক ফা-আরদ্বীন রহমানের বাড়ির দেয়ালে।
রোববার (১২ জানুয়ারি) রাতে সরদহ ইউনিয়নের পশ্চিম বালিয়াডাঙা গ্রামে ফা-আরদ্বীনের বাড়ির দেয়ালে এ কথা লেখা হয়।
জানা গেছে, ফা-আরদ্বীন রহমানের বাবার নাম বজলুর রহমান। তিনি সিটি পলিটেকনিক অ্যান্ড টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। দেয়ালের লেখাগুলো দেখার পর তার পরিবারের সদস্যদের মাঝেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ নিয়ে থানায় একটি অভিযোগ করেছেন ফা-আরদ্বীন রহমান। পুলিশ বলছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ১৮ জুলাই চারঘাট উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। সেই মিছিল থেকে ফা-আরদ্বীন রহমানসহ আট শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাদের জেলাহাজতে পাঠানো হয়। আওয়ামী সরকারের পতনের পরদিন তিনি মুক্তি পান।
ফা-আরদ্বীনের দাবি, তিনি শেখ হাসিনার সরকারকে স্বৈরাচার তকমা দিয়ে ফেসবুকে সোচ্চার ছিলেন। তাই জেলে থাকা অবস্থায় ২১ জুলাই রাতে কারাগারের টর্চার সেলে নিয়ে হাত-পা বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এখনো তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। এ অবস্থায় বাড়ির দেয়ালে ‘মৃত্যুর হুমকি’ পাওয়ায় তিনি ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
ফা-আরদ্বীন রহমান বলেন, ‘রোববার রাত ১০টার দিকে বাবার সঙ্গে বাজার থেকে বাসায় ফিরি। এ সময় দেয়ালে লেখাটি দেখতে পাই। বিকালেও লেখাটি ছিল না। অধিকাংশ সময় বাবা-মা বাড়িতে একা থাকেন। তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আতঙ্কিত হচ্ছি। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেছি।’
চারঘাট মডেল থানার ওসি আফজাল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে ফা-আরদ্বীন রহমান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।’ এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ চলছে বলেও জানান ওসি।
উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাতের অন্ধকারে দেয়ালে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান লিখে রাখে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া গত শনি (১১ জানুয়ারি) ও রোববার (১২ জানুয়ারি) রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি আবাসিক হল ও মসজিদে পবিত্র কোরআন দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে ফেলে। মুসলমানদের পবিত্র এই ধর্মগ্রন্থ পোড়ানো, এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতারা। এরই মধ্যেই ন্যক্কারজনক এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে।
মন্তব্য করুন