ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছেলেদের হল বন্ধ ঘোষণা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে আগামী তিন দিন শ্রেণি কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রোববার (১২ জানুয়ারি) রাত পৌনে ৮টায় সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কলেজ ও সাধারণ শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, আনন্দ মোহন কলেজের হলের নিয়ন্ত্রণ ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিতে চাচ্ছে এমন খবর ছড়াতে থাকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে সিট নিয়ে বিকেল থেকে শুরু হওয়া ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
রাতে কলেজ গেটের বাইরে ছাত্রদল-বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকর্মীরা এবং ভেতরে ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। হলগুলোতে ছাত্রলীগের মতো নিয়ন্ত্রণ আর যেন ফিরে না আসে, সেই দাবি হোস্টেলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
গত ৮ জানুয়ারি হলের সিট নবায়নের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। হলের সিট বরাদ্দের জন্য বছরে পাঁচ হাজার টাকা থেকে বিগত ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণের সময় সাত হাজার টাকা করা হয়। এখন শিক্ষার্থীরা সেটি কমিয়ে পাঁচ হাজার টাকা করারও দাবি জানাচ্ছিলেন।
আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ কালবেলাকে বলেন, কলেজের হলের সিট বণ্টন চাচ্ছে বিভিন্ন দল; কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা মানতে চাচ্ছেন না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক আশিকুর রহমান, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ছাত্রদলের তানজিল আহমেদ এবং ছাত্রশিবিরও সিট চাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কারও দাসত্ব করবেন না, কোনো দলকে যেন সিট দেওয়া না হয় সেই দাবি জানাচ্ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহের সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, হলে আমরা কোনো সিট চাইনি। আমাদের দাবি ছিল অছাত্র যারা রয়েছে তারা হলে থাকতে পারবে না, হলভিত্তিক যেন সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। সিট বরাদ্দ হবে ডিপার্টমেন্ট থেকে, কোনো রাজনৈতিক সংগঠন থেকে নয়, এটি আমাদের দাবি ছিল। ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্ট যারা আছে তাদের হল থেকে বের করে দিতে হবে। আমাদের সঙ্গে সভা চলার সময় ছাত্রলীগের যারা এখনও আছে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে ঘটনাটি ঘটায়।
আনন্দ মোহন কলেজে ছাত্রদলের নেতৃত্ব দেওয়া একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হলে আমরা কোনো সিট চাইনি, অধ্যক্ষের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলার সময় ওরা এসে হট্টগোল করেছে। আমাদের দাবি ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ, বিবাহিত, চাকরিজীবী ও ছাত্রলীগে যারা জড়িত তাদের ছাত্রাবাস থেকে বের করতে হবে। এ দাবি জানানোর পরই বাইরে থেকে এসে আমাদের ওপর হামলা করে। আমাদের কয়েকজন আহতও হয়েছে।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। তবে আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনা তদন্তপূর্বক জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য করুন