১০ বছরের বেশি সময় ধরে অকেজো হয়ে আছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের ৯টি ফেরির ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট। এতে কুয়াশার মধ্যে ফেরিগুলো চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। তবে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে তেমন কোনো সদুত্তর মেলেনি বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমাতে ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের ৯টি ফেরিতে স্থাপন করা হয় উন্নত প্রযুক্তির ফগ লাইট। আওয়ামী লীগের তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের ভাই ছিলেন এ কাজটির ঠিকাদার। কিন্তু লাইটগুলো লাগানোর কিছুদিন পর থেকেই সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেরির কয়েকজন মাস্টার (চালক) কালবেলাকে জানান, ফেরিতে যে সময় ফগ লাইট লাগানো হয়েছিল, ওই সময়ই লাইটগুলো ছিল বিকল। এ কারণে পুরো টাকাই নষ্ট হয়েছে। নদীর নাব্য কমে যাওয়ায় নৌরুটের চ্যানেলগুলো সরু হয়ে গেছে, বিধায় দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে কুয়াশার কারণে ফেরি বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
এদিকে ফেরিগুলো বন্ধ থাকায় এই নৌরুটের যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অনেক।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে গিয়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে দেখা যায়, ঘনকুয়াশায় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের দীর্ঘ যানবাহনের সৃষ্টি হয়। নদী পারাপারের অপেক্ষায় ছিল যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় পরিবহন।
পণ্যবাহী ট্রাকচালক হাসেম বেপারি বলেন, কুয়াশার মধ্যে ফেরি বন্ধ থাকলে আমরা সঠিক সময়ে গৌন্তব্যে পৌঁছাতে পারি না। ট্রাকে থাকা মালামাল অনেক সময় ফেরি বন্ধের কারণে পচে নষ্ট হয়ে যায়। এতে আমাদের ও মহাজনের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
সাগর হোসেন নামের এক যুবক বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে ফেরিতে যারা ফগ লাইটের নামে ভোকাস লাইট লাগিয়েছে এবং এ থেকে কোটি কোটি টাকা যারা দুর্নীতি করেছে তাদের তালিকা করে অতি দ্রুতই প্রকাশ করার দাবি জানাই। সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি হোক এটাই চাই আমরা।
সিয়াম ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আজ আমার পরীক্ষা আছে। তাই খুব সকালে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পৌঁছেছি। কিন্তু ঘাটে এসেই দেখছি কুয়াশার কারণে ফেরি বন্ধ। এখন কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। আমাদের এ কষ্টের কথা কে শুনবে। আমরা এ থেকে প্রতিকার চাই। আমরা চাই এ বিষয়টা সরকার নজর দিক।
নাছরিন আক্তার নামের এক যাত্রী বলেন, একদিকে যেমন প্রচণ্ড কুয়াশা, অন্যদিকে বাতাস ও পদ্মার পাড়ে ভয়াবহ শীত। ফেরি বন্ধের কারণে আমাদের প্রচণ্ড দুর্ভোগ বাড়ছে। তারপরও সময় মতো যেতে পারব না। কখন যে কুয়াশা কমবে তারপর ফেরি চলবে তারপর যাবো।
স্থানীয় ফারুক খান নামের এক ব্যক্তি বলেন, শুধু শুনেছি ফেরিতে ফগ লাইট লাগানো হয়েছে। তবে কোনো দিনও দেখি নাই কুয়াশার মধ্যে ফেরি চলাচল। এগুলো শুধু নামেই। কোনো কাজ হয় নাই কোনোদিন। আমরা চাই, সঠিকভাবে তদন্ত করে ফগ লাইটের নামে যারা ভুয়া ফগ লাইট ফেরিতে লাগিয়েছে তাদের শাস্তি হোক।
তবে এসব বিষয়ে বিশেষ কোনো নজর নেই বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষের। বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখা কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম কালবেলাকে জানান, ফগ লাইট কাজ করে না। কুয়াশা পড়লে ফেরিগুলো ঘাটেই নোঙর করা লাগে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আমরা শুধু বাণিজ্যিক বিষয়টা দেখি। লাইট স্থাপন, সংযোজন বা বিয়োজনের বিষয়টা দেখে কারিগরি বিভাগ। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কারিগরি বিভাগ ছাড়া সঠিক খবরটি পাওয়া সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন