ভোলার তজুমদ্দিনে অযত্ন আর অবহেলায় ৫ বছর ধরে পড়ে আছে সরকারের দেওয়া নৌ অ্যাম্বুলেন্স। দুর্গম চরবাসীর জরুরি স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি দেওয়া হলেও রোগী বহন করেনি এক দিনও। এটি বছরের পর বছর খালে পড়ে আছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেতরে ময়লা-আবর্জনা জমে রোগী পরিবহনে অনুপযোগী হয়ে গেছে। এটি এক দিনও না চললেও ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে ডিজেল খরচ।
সরেজমিন দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সটি শশীগঞ্জ স্লুইসগেটের দক্ষিণ পাশে বেড়িবাঁধের ভেতরে একটি খালে বাঁধা (নদীর সঙ্গে সংযোগ নেই) খালে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। সামনের ও পাশের গ্লাস এবং মেশিন ভাঙা। ভেতরে নেই রোগী শোয়ার ও স্বজনদের বসার সিট। যে কারণে রাষ্ট্রের ৩০ লাখ টাকা গচ্চা ছাড়া আর কোনো কাজে আসেনি। এক দিনের জন্য চলেনি এবং বহন করতে পারেনি একজন রোগীও। এসবের মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে চর জহিরউদ্দিন ও চর মোজাম্মেলে চলাচল বাবদ ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে তেল খরচ দেখিয়ে।
তেল খরচের কোনো বিল-ভাউচার দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল চর মোজাম্মেল, চর জহিরউদ্দিন, চর নাসরিন, সিডার চর ও চর উরিলে বসবাসরত মানুষের জরুরি চিকিৎসাসেবায় সরকার এটি বরাদ্দ দিলেও এক দিনের জন্যও কাজে আসেনি চরবাসীর।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপকূলীয় দুর্গত এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি বেসড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৯-২০ অর্থবছরে কমিউনিটি বেসড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দ অনুযায়ী ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি তজুমদ্দিন হাসপাতালে এটি হস্তান্তর করা হয়। এটির বরাদ্দ মূল্য ছিল ৩০ লাখ টাকা।
ভোলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানসহ নানা কারণে তজুমদ্দিন উপজেলার অ্যাম্বুলেন্সটি ২০২০ সালের ২২ মে বিকল দেখানো হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি আউটসোর্সিং থেকে মহিউদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে ড্রাইভার হিসেবে পাঁচ দিনের ট্রেনিং করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কমিউনিটি বেসড হেলথ কেয়ার প্রকল্প মাধ্যমে তাকে বেতনভাতা প্রদান করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি পড়ে থেকে নষ্ট হয়েছে। চরাঞ্চলবাসীর কোনো কাজেই আসেনি এটি। চরাঞ্চলের মানুষ যে কোনো সমস্যায় শশীগঞ্জ স্লুইসগেটের ট্রলারে পারাপার হয়ে থাকে। রাতে কারও চিকিৎসা বা অন্য জরুরি প্রয়োজনে ঘাটের মাঝিদের ফোন দিলে তারাই পার করেন তাদের। শশীগঞ্জ স্লুইসগেটের ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্যাহ বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের জন্য নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি বরাদ্দ দেওয়া হলেও এটি চরবাসীর কোনো কাজেই আসেনি। এ পর্যন্ত একজন রোগীও বহন করতে পারেনি অ্যাম্বুলেন্সটি। বর্তমানে শশীগঞ্জ স্লুইসগেটের দক্ষিণপাশে বেড়িবাঁধের ভেতরে একটি খালের মধ্যে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে রাষ্ট্রের টাকায় কেনা অ্যাম্বুলেন্সটি।
চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষ বলেন, সরকার আমাদের জন্য এমন একটি বাহনের ব্যবস্থা করছে, তা আমরা জানি না। আপনাদের কাছে শুনলাম।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উত্তম কুমার সরকার বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। তার পরও যতদূর জানতে পেরেছি কমিউনিটি বেসড হেলথ কেয়ার প্রকল্পটি বন্ধ হওয়ার কারণে এটি চালু করা সম্ভব না-ও হতে পারে। এটি একেবারেই মেরামতের অযোগ্য বর্তমানে। তবু যোগাযোগ করে দেখতে হবে অ্যাম্বুলেন্সটির কী করা যায়।
মন্তব্য করুন