খুলনা সিটি করপোরেশনের অপসারিত কাউন্সিলর গোলাম রব্বানি টিপুর বড় ভাই গোলাম রসুল বলেছেন, ‘কাউন্সিলর ইফতেখার ওরফে চালুসহ কয়েকজন টোপ দিয়ে টিপুকে কক্সবাজার নিয়ে যায়। শুটার ভাড়া করে সেখানে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তারা। সে কখন হোটেলে উঠলো, কখন ফাঁকা জায়গায় গেল এগুলো ভেতর থেকে না বললে কীভাবে জানবে খুনি।’
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোলাম রব্বানী টিপুকে গুলি করে হত্যার ঘটনার পর শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) কালবেলাকে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোলাম রব্বানী টিপুকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রব্বানী সীগাল হোটেলের সামনে ঝাউ বাগানের ভেতর কাঠের তৈরি সেতুর পাশে হাঁটছিলেন। তখন দুই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে গিয়ে তার মাথায় গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গোলাম রব্বানী টিপু খুলনা সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের সদ্য অপসারিত কাউন্সিলর এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি। এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী টিপু চলতেন গান ম্যান নিয়ে। গত এপ্রিলে তার বাড়িতে একদফা ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। তার বিরুদ্ধে এলাকায় চরমপন্থি কানেকশনের পুরোনো অভিযোগ রয়েছে। গত ২০১৫ সালে খুলনার চরমপন্থি নেতা শহিদ ওরফে হুজি শহিদ হত্যা মামলার আসামি ছিলেন গোলাম রব্বানী। গোলাম রসুল বলেন, হতে পারে ওই ঘটনায় কেউ প্রতিশোধ নিতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, টিপুদের আদিবাড়ি রূপসার আনন্দনগর এলাকায়। পাঁচ দশক ধরে তারা নগরের দেয়ানা এলাকায় বাস করছেন। বাবা মো. গোলাম আকবর ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে টিপু মেজ। বড় ভাই গোলাম রসুল স্কুলশিক্ষক আর ছোট ভাই গোলাম রহমান পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করেন। সব ভাই এক বাড়িতে থাকতেন। রব্বানীর ১৩ বছর বয়সী একটি ছেলে ও ৮ বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। রব্বানীর জমিজমা কেনাবেচার ব্যবসা ছিল। একসময় কক্সবাজারেও তার ব্যবসা ছিল।
নিহত টিপুর বড় ভাই গোলাম রসুল বলেন, ‘সে এখানকার একজন জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিল। জনপ্রিয়তা এত বেশি ছিল যে, সে জীবিত থাকলে এখানে আর কেউ কাউন্সিলর হতে পারবে না। ৮ জানুয়ারি ১৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইফতেখার ওরফে চালুসহ কয়েকজন রব্বানীকে টোপ দিয়ে কক্সবাজারে নিয়ে যায়। ব্যবসা বা অন্য কোনো কথা বলে হয়তো নিয়ে যায়। ওখানে আগে থেকেই শুটার সেট করা ছিল।’
তিনি আরও বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে রব্বানীকে হত্যার চেষ্টা চলছে। বাড়িতে বোমা হামলা হয়েছে। যেভাবেই হোক, তারা সফল হয়েছে। তবে আমি কারও নাম বলব না। যেটাই হোক, এটা আমাদের এলাকাভিত্তিক দ্বন্দ্ব। তাকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কক্সবাজারে তার (টিপু) শত্রু ছিল না। খুলনা, দৌলতপুর, পাবলা, দেয়ানা এখান থেকেই এটার সূত্রপাত। অন্য বিষয়ের চেয়ে এটার পেছনে এলাকার দ্বন্দ্ব, এলাকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কাজ করেছে।
মন্তব্য করুন