রাজশাহীর পদ্মার চরে চলছে পরিযায়ী পাখি হত্যার মহোৎসব। চরগুলোর বেশ কিছু জায়গায় বিষ টোপ দিয়ে পাখি মারা হচ্ছে। আর এসব বিষয়ে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ এখনো চোখে মেলেনি। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালেও চরে শতাধিক পাখিকে মরে থাকতে দেখা গেছে।
শীত মৌসুমে প্রচণ্ড শীতপ্রধান দেশ থেকে এ দেশে ঝাঁকে ঝাঁকে আসে এসব পরিযায়ী পাখি। নদীনালা, খালবিল আর হাওর-বাঁওড়ে বিচরণ করে বেড়ায়। এ দেশের জলাশয় আর ডাঙা থেকে জোগাড় করা খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে। শীত মৌসুম শেষে আবার আগের ঠিকানায় ফিরে যায়। কিন্তু রাজশাহীতে এসব পাখি বাঁচতে এসে নিষ্ঠুর মানবিকতার কাছে হার মানছে।
অতিথি পাখি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাখি শিকারের কারণে রাজশাহীর পদ্মায় ১৪ বছরে ১০ ভাগের এক ভাগ পাখি কমেছে। তবে বন বিভাগের দাবি, পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর তালাইমারি পদ্মর চর থেকে টি-বাঁধ এলাকা পর্যন্ত অন্তত ৮টি গ্রুপ পাখি শিকার করেন। তারা বিশেষ এক জাতের বিষ মাছের সঙ্গে মিশিয়ে রাতের আঁধারে দিয়ে আসে। পরে সেই খাবার খেয়ে পাখি অসুস্থ হয়ে পড়লে সেগুলো তারা ধরে জবাই করে বিক্রি করছে। রাজশাহীর বেশ কিছু বাজারে এসব পাখি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহীর টি-বাঁধের ওপারে চরে মৃত পাখি পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। এ সময় তারা আন্তত ১০টি চখাচখি পাখি মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। তবে উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় পাখি শিকারিরা।
রাজশাহীর টি-বাঁধ এলাকার বাসিন্দা নিয়ামত আলী বলেন, ভোর রাতে কিছু মানুষ চরে গিয়ে বিষ দেওয়া মাছ রেখে আসে, সকালে সেগুলো খেয়ে পাখিরা খেয়ে মরে পড়ে থাকে। শিকারিরা মরা পাখি তুলে নিয়ে জবাই করে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে। এভাবে প্রতিদিনই অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি পাখি শিকারিরা মেরে নিয়ে যায়।
এদিকে, পাখিপ্রেমী ও গবেষকদের মতে, পাখি নিধনের ফলে এক সময়ের রাজশাহী এখন পাখিশূন্য হয়ে পড়ছে। এখন আর আগের মতো পাখি দেখা যায় না। আগের তুলনায় প্রায় ১০ ভাগের এক ভাগেরও কম পাখি আসছে রাজশাহীতে।
পাখি পর্যবেক্ষক ও ফ্রিল্যান্স আলোচিত্রী হাসনাত রনি বলেন, রাজশাহী শহর সংলগ্ন পদ্মার চরগুলোতে বেশ কিছু জায়গায় বিষ টোপ দিয়ে পাখি মারা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালেও ছোট্ট একটা চরে শতাধিক পাখি বিষটোপ খেয়ে মরে থাকতে দেখা গেছে। গত কয়েকদিনে স্থানীয় কিছু পাখিপ্রেমী মৃত পাখিসহ কয়েকজন অপরাধীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে বলে শুনেছি। এই নির্মমতা বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে দিন দিন পাখি শিকারের কারণে পাখি কমে আসছে। পাখিদের আবাসস্থল নিরাপদ মনে না হওয়ার কারণে তারা এখানে আর আসছে না। ২০১০ সালের পর ১০ ভাগের এক ভাগও পাখি আর আসে না। আগে নভেম্বর থেকে মার্চ পদ্মায় পাখির আনাগোনা দেখা যেত। এখন ডিসেম্বর জানুয়ারিতেও পাখি দেখতে পাওয়া যায় কম। রাজশাহীতে এখন অতিথি পাখি দীর্ঘ সময় এখন থাকে না। পাখি নিধন বন্ধ না হলে পাখি আসা আরও কমে যাবে। তাই এখনই এসব বন্ধ করতে হবে।
রাজশাহী বিভাগীয় বন্যপ্রাণি পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, পদ্মার চরে পাখি শিকারিরা পাখি শিকার করছে বিষয়টি শুনেছি। তাদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন