সার দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কৃষকদের তোপের মুখে পড়ে অবরুদ্ধ হয়েছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজাদ। বুধবার (০৮ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদে সারের জন্য টোকেন দিতে গিয়ে উপস্থিত কৃষকদের কাছে অবরুদ্ধ হন তিনি। পরে কৌশলে পালিয়ে রক্ষা হয় তার। কৃষকরা জানান, চলতি রবি মৌসুমে আলু সরিষা, ভুট্টা ও তামাকসহ বিভিন্ন জাতে সবজি চাষাবাদে প্রচুর পরিমাণ সারের প্রয়োজন হয়। এ সময় কিছু অসাধু বিক্রেতা সার গোপনে মজুত করে কালো বাজারে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে। ফলে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। সরকারের নিবন্ধিত সার বিক্রেতাদের কাছে মিলছে না ন্যায্যমূল্যের সার। অথচ অনিবন্ধিত খুচরা বিক্রেতাদের অতিরিক্ত দাম দিলে সার মিলছে। সারের সংকট নিরসনে কৃষকদের চাহিদা বিবেচনা করে বিশেষ টোকেন চালু করে কৃষি বিভাগ।
জানা যায়, কৃষি বিভাগের স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত টোকেন নিয়ে ডিলার পয়েন্টে গেলে সরকারি দামে সার মিলছে। নয়তো অনিবন্ধিত বিক্রেতার কাছ থেকে বস্তা প্রতি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা বেশি দামে কিনতে হয়। তাই ন্যায্যমূল্যে সার পেতে কৃষকরা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পিছু ছুটছেন। তারা ইউনিয়ন পরিষদের বসে কৃষকদের টোকেন দিচ্ছেন। সে টোকেনের মাধ্যমে সরকারি দামে সার কিনছে চাষিরা।
বুধবার চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে কৃষকদের সারের টোকেন দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজাদ। এ সময় শত শত কৃষক টোকেনের জন্য লাইনে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে মাত্র ৩০-৩৫ জন কৃষককে টোকেন দেওয়ার পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সার শেষ বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা। এতে ক্ষুব্ধ হন চাষিরা। পরে কৃষকরা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় কৌশলে পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পান আজাদ। সারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও সার না পেয়ে ক্ষুব্ধ হন চাষিরা।
কৃষক সামাদ মিয়া বলেন, আমার প্রায় দেড় একর জমিতে বিভিন্ন ফসল রয়েছে। যার জন্য দুই বস্তা সার কিনতে কৃষি অফিসের নির্ধারিত লাইনে দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। মাত্র ৩০-৩২ জনকে টোকেন দিয়েই বললো যে আজকের বরাদ্ধ শেষ। আর সার দেওয়া হবে না। বৃহস্পতিবার (০৯ জানুয়ারি) পুনরায় ডেকেছেন। আজ কাজ ফেলে এসে কোনো লাভ হলো না। কৃষি বিভাগের লোকজন আর ডিলার মিলে সার অনাবন্ধিতদের কাছে বিক্রি করছে। নিবন্ধিত ডিলাররা কৃষকদের সার না দিয়ে অনিবন্ধিত বিক্রেতাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছে। সার তো কেউ বাড়িতে উৎপাদন করে না। তাহলে অনিবন্ধিত বিক্রেতারা সার পেলো কোথায়?
এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজাদকে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বরে একাধিক বার কল করে তার নাম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার তুষার কান্তি জানান, কিছু কৃষক সংকটের আতংকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি করে কিনে মজুদ করে রাখছেন। ক্ষুদ্র কিছু চাষি সার পাচ্ছে না বলে সংকটের গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা যে পরিমাণ সার পেয়েছি, তা যাতে কৃষকদের মাঝে সমহারে পৌঁছে দেওয়া যায় সেজন্য টোকেন সিস্টেম চালু করেছি। সারের বরাদ্ধের চেয়ে অতিরিক্ত কৃষক লাইনে দাঁড়ানোর কারণে চাপারহাট পয়েন্টে বুধবার সার দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আবার কার্যক্রম শুরু হবে। এতে কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে আজাদকে অবরুদ্ধ করেছিলেন। পরে তিনি কৌশলে চলে এসেছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, চলতি মাসে চাহিদার অর্ধেক বরাদ্ধ পেয়েছি। যার কারণে সার নিয়ে কিছুটা জঠিলতা তৈরি হয়েছে। তবে বরাদ্ধকৃত সার পুরোটা আমরা পেয়েছি। কিছু কৃষক বর্তমান চাহিদার চেয়ে বেশি কিনে আগামী মৌসুমের জন্য মজুদ করছেন। যার কারণে হয়তো কোনো কোনো চাষি বঞ্চিত হচ্ছেন। সার পর্যাক্রমে আসছে এবং আসবে। তাই মজুদ না করে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ডিলার পয়েন্টে ক্রয় করতে কৃষকদের অনুরোধ জানান তিনি।
মন্তব্য করুন
আর্কাইভ 
| ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ 
