সুনামগঞ্জে যুবদল নেতা আরিফ রব্বানী হিমেলের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ বিএনপির নেতাকর্মীরাও। প্রশাসন, পরিবহন খাত, বালুমহাল-জলমহাল পর্যন্ত রয়েছে তার আধিপত্য। সীমান্তে চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত বলে বিএনপি নেতারা জানান। পারিবারিকভাবে গড়ে তুলেছেন বিশাল সিন্ডিকেট।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, হিমেল গড়ে এক থেকে দেড়লাখ টাকা চাঁদা তোলেন বিভিন্ন খাত থেকে। মাসে ৫০ লাখ টাকার টার্গেট করে প্রতিদিন বিভিন্ন অফিসে দলবল নিয়ে হানা দেন। এক একজনকে দেওয়া হয়েছে এক এক দায়িত্ব।
হিমেলের আপন ফুফাতো ভাই আলমগীর নিয়ন্ত্রণ করেন সীমান্তের চোরাচালান। ছাত্রদলের সদস্যসচিব কোহিনূর অবৈধ বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের সিন্ডিকেটে আছেন- রাধানগরের কয়েছ আহমদ, তারেক আহমদ, নতুন পাড়ার শাহরিয়ার, শ্রীধরপুরের সুহাংগীর, শক্তিয়ারখলার কাউছার আহমদ।
আরিফ রব্বানী হিমেল সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামের পুত্র। হিমেলও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক।
গত ডিসেম্বর মাসে আরিফ রাব্বানী হিমেলের নেতৃত্বে চাঁদাবাজ দল ফতেপুর ইউনিয়নের রঙ্গিয়ারচর এলাকায় সরকারি আশ্রয়ণ কেন্দ্র ঠিকাদারদের কাছে চাঁদা দাবি করেন। এর প্রতিবাদ করে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বিএনপির অপর একটি অংশ।
২২ ডিসেম্বর রোববার সন্ধ্যায় চাঁদা না দেওয়ায় হিমেল বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে বিশ্বম্ভরপুর থানা ভবনের সামনে হামলা চালায় বিএনপির এক নেতার ওপর। একপর্যায় হিমেলসহ অন্যরা বিএনপি নেতা আব্বাছ আলীর দোকান ও বাসা বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাসার তালা ভেঙে নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ঠিকাদার রেজাউল আলম বাদী হয়ে হিমেলসহ ছয়জনকে আসামি করে বিশ্বম্ভরপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতারা এই বাপ-ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মান-সম্মানের ভয়ে মুখ খুলছেন না। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বিএনপির আদর্শকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে বলে অনেক নেতাদের মুখরোচক আলোচনা।
এ বিষয়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বিএনপির নেতা আব্বাস আলী কালবেলাকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে হিমেলের চাঁদাবাজি, চোরাচালানসহ এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়ে মানুষকে হয়রানি করছে। বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বাপ-ছেলে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফ রব্বানী হিমেল কালবেলাকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার সবই বানোয়াট। দলের মধ্যে কিছু লোক আছে তাদের সাঙ্গে আমার কিছুটা গন্ডগোল আছে। এটা নেতারা শেষ করবেন। চাঁদার ব্যাপারে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে রাজনীতি করি, এখন পাশাপাশি ঠিকাদারিও করি। আমার বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগ নেই।
বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি মোখলেছুর রহমান থানায় অভিযোগের কথা স্বীকার করে কালবেলাকে বলেন, দলীয় কোন্দলে তাদের নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। দলীয়ভাবে মীমাংসা না হলে মামলা রেকর্ড করা হবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুর রশীদ কালবেলাকে বলেন, আমি সদ্য দায়িত্ব পেয়েছি। এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন