গত পাঁচ বছরে কৃষকের কাছ থেকে এক ছটাক ধানও কিনতে পারেনি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা খাদ্যগুদাম। প্রতি বছরই বোরো ও আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দিলেও তার সিকিভাগও পূরণ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে বছরের পর বছর ধান সংগ্রহ না করেই চলছে দপ্তরের কার্যক্রম।
কৃষকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারদর বেশি হওয়ায় গুদামে ধান দিচ্ছেন না তারা। এ ছাড়া, অনলাইনে নিবন্ধন, আর্দ্রতা যাচাই, পরিবহন খরচ ও ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনসহ নানা জটিলতার কারণে গুদামে ধান বিক্রিতে আগ্রহ নেই কৃষকের।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত উপজেলা খাদ্যগুদামে কোনো ধান সংগ্রহ হয়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩৬ টন। নির্ধারিত তিন মাস সময়ে ৩০ টাকা কেজি দরে এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। একই অর্থবছরে ৭ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩২ টাকা কেজি দরে ধান সংগ্রহ অভিযান করেছিল উপজেলা খাদ্য দপ্তর। লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ৭৩ টন। কিন্তু সে সময়ও খাদ্যগুদামের সংগ্রহের পরিমাণ ছিল শূন্য।
এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গত ১১ নভেম্বর থেকে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। ৩৩ টাকা কেজি দরে এবার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৪৬১ টন। তবে, প্রায় দুই মাস শেষ হলেও এখনো ধান সংগ্রহের পরিমাণ শূন্য। তাই, চলতি মৌসুমেও খাদ্য অধিদপ্তরের ধান সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বাগাতিপাড়া উপজেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২০ হাজার ৮৪১ টন এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২২ হাজার ৭৬ টন এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৪ হাজার ৫৬ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। উপজেলায় চাহিদার অধিক পরিমাণ ধান উৎপাদন হলেও প্রতি বছরই ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে উপজেলা খাদ্যগুদাম।
উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের হাটগোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক আ. হান্নান (৫০) বলেন, সরকারি দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি, টাকাও পাওয়া যায় নগদ। তাই, সরকারি গুদামে ধান না দিয়ে বাইরেই বিক্রি করছি। গুদামে ধান দিতে গেলে একদিকে যেমন পরিবহন খরচ বেশি, আবার টাকাও নগদ পাওয়া যায় না।
সদর ইউনিয়নের যোগীপাড়া এলাকার আলাল উদ্দিন (৫৮) জানান, কম দাম ও আর্দ্রতাসহ বিভিন্ন অজুহাতের কারণে তারা গুদামে যেতে পারেন না। আর ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা গুদামের চেয়ে বেশি দামে বাড়ি থেকেই ধান নিয়ে যান। স্থানীয় বাজারের সঙ্গে মিল রেখে সরকারি দাম নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।
উপজেলার মালঞ্চি বাজারের ধান ব্যবসায়ী মজনু মিয়া (৪৫) বলেন, সরকারি দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকদের খাদ্যগুদামে ধান বিক্রির আগ্রহ নেই। কৃষকরা যেখানে দাম বেশি পাবেন সেখানেই ধান বিক্রি করবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা অতিরিক্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক ডালিম কাজী জানান, ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধান সংগ্রহ করতে পারেনি উপজেলা খাদ্য দপ্তর। ধান সংগ্রহের জন্য তার দপ্তরের পক্ষ থেকে লিফলেট, মাইকিংসহ যাবতীয় প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। স্থানীয় বাজারমূল্যের চেয়ে সরকার নির্ধারিত দাম কম হওয়ায় তাদের কাছে ধান দিচ্ছেন না কৃষকরা। সরকার নির্ধারিত দাম যদি বাজারের চেয়ে বেশি হতো, কৃষকরা অবশ্যই গুদামে ধান দিতেন বলেন জানান তিনি।
মন্তব্য করুন