দীর্ঘ ১০ বছর ৬ মাস আইনি লড়াইয়ের পর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের দায়ের করা ৫০ কোটি টাকার মানহানি মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ২০১৪ সালে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মনি এবং পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন তিনি।
সোমবার (০৬ জানুয়ারি) দুপুরে সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা জজ আদালতের-২ বিচারক মো. বিল্লাল হোসেন আদালতে যুক্তিতর্ক শেষে মামলাটি খারিজ করে দেন।
মামলাটির বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. গোলাম মোস্তফা। এ সময় তার সহযোগী হিসেবে আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাড. আজহার হোসেন ও অ্যাড. আরিফুর রহমান আলো।
আইনজীবী অ্যাড. গোলাম মোস্তফা বলেন, ২০১৪ সালের ৩ এপ্রিল দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘সাবেকদের আমলনামা’, ‘সাতক্ষীরাকে দেশ বিচ্ছিন্ন করেছিলেন রুহুল হক’ শীর্ষক শিরোনামে তৎকালীন সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই সংবাদের মধ্যে তার স্বাস্থ্য খাতের লুটপাট, ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতিসহ তার স্ত্রী ইলা হক ও ছেলে জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট এবং লাখ লাখ টাকা চাকরি বাণিজ্যের খবর প্রকাশিত হয়। একইসঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন এবং দলীয় কর্মসূচিতে না থেকে ঢাকায় অবস্থানসহ সাতক্ষীরার রাজনৈতিক সহিংসতা ও দেশ থেকে সাতক্ষীরা জেলা বিচ্ছিন্নের খবর বেরিয়ে আসে।
এ ঘটনার পর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদের পাহাড় তৈরি এবং সম্পদের তথ্য গোপন করে তথ্য বিবরণীতে তার সম্পদের নয়-ছয়-এর অভিযোগে মামলা দায়ের হয়।
তিনি বলেন, ‘মামলা থেকে বাঁচতে তিনি ২০১৪ সালের ২ জুন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক নঈম নিজাম, প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী ও পত্রিকাটির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি (সংবাদদাতা) মনিরুল ইসলাম মনির বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা জজ আদালত-২ এ ৫০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করেন। এ মামলার বিবাদী পত্রিকাটির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে নিউজের স্বপক্ষে আদালতে জবাব দাখিল করেন।’
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর সে সময়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হকের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়। কিন্তু তিনি তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী হওয়ায় শেখ রেহেনা ও তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে রেহাই পান ডা. রুহুল হক ।
তিনি বলেন, সাতক্ষীরা আদালতে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) ড. শম্ভুনাথ সিংহ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষ নিয়ে মামলাটি দীর্ঘদিন পরিচালনা করেন। মামলার নথিতে ডা. রুহুল হকের মাধ্যমে তা পরিচালনার জন্য শম্ভুনাথের কথা উল্লেখ করা না থাকলেও বাদীর পক্ষে জোরপূর্বক জিপির ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে মামলায় জবানবন্দি থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছিল। অতঃপর সোমবার মামলার দিন ধার্য থাকায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালতের বিচারক হয়রানিমূলক মামলাটি খারিজ করে দেন।
মন্তব্য করুন