রংপুরের পীরগঞ্জে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলের চেষ্টা ও গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ফরমান আলী বাদী হয়ে পীরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নের ইকলিমপুর গ্রামে কবুলিয়ত সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে গত ৪০ বছর ধরে ফরমান আলী বসবাস করে আসছে। চতরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল মালেক মানিক প্রধান মিয়ার নেতৃত্বে পীরগঞ্জ মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক কাউছার ও তার ভাই আলমগীর হোসেন (৩০) এবং মো. শহিদুল মিয়া (মিঠু) (২৭) ওই সম্পত্তিটি দীর্ঘদিন থেকে দখল করা চেষ্টা করতেছে ও ফরমান আলীর পরিবারের লোকজনকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। গত ২৮ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপি নেতা মানিক মিয়ার নেতৃত্বে অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জন দলীয় নেতাকর্মীসহ ফরমান আলীর বাড়ির সামনে থাকা ১টি কাঠাল গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে। এদিকে গাছ কেটে নেওয়ার দুদিন পর ১ জানুয়ারি ফরমান আলীর বাড়ি সংলগ্ন গোডাউনের সামনে দখলের উদ্দেশ্যে বালু মাটি ফেলায় ওই বিএনপি নেতা। এসময় ফরমান আলী ও তার পরিবারের লোকজন বাধা দিলে ওই বিএনপি নেতা মানিক ও তার লোকজন বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়।
এদিকে গাছ কেটে নেওয়া ও জমি দখলের চেষ্টার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে পীরগঞ্জ থানার ভেতরেই ভুক্তভোগী ফরমান আলীকে আক্রমণের চেষ্টার অভিযোগ উঠে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মানিকের বিরুদ্ধে।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী ফরমান আলী জানান, চতরা ইউনিয়নের ইকলিমপুর মৌজার অসংশোধিত ম্যাপমূলে আমার জমি দখলের চেষ্টা করতেছে বিএনপি নেতা মানিক ও তার লোকজন। ত্রুটিযুক্ত ম্যাপটি সংশোধনের জন্য বর্তমানে ঢাকা হেড অফিসে রয়েছে। আমার জমির গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি জন্য ওসির সামনেই বিএনপি নেতা মানিক আমাকে হুমকি দিচ্ছে। ওসির রুম থেকে বের হওয়ার সঙ্গেই আমাক মারতে ধরছে পরে থানার দুইটা পুলিশ গিয়ে আমাক বাঁচিয়ে নিয়েছে। তিনি জানান, থানার ভেতরেও আমি নিরাপদ না। আমার গাছ কেটে নিলো, জমি দখলের চেষ্টা করতেছে। প্রতিনিয়ত হুমকি দিতেছে। পুলিশ কিছুই করতেছে না বিএনপি নেতা জন্য। উল্টো এখন ওরা নিজের দোষ আড়াল করতে আমার নামে থানায় ভাঙচুরের অভিযোগ দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করতেছে।
পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল মালেক মানিক প্রধান মিয়া জানান, ফরমান সাহেবের পাশের জমিটা আমার চাচাতো ভাই আলমগীর কিনেছে। আমি শুধু ফরমানকে বলেছিলাম গাছের ডালপালা কেটে নেওয়ার জন্য। পরে শুনি ওরা নিজের গাছ নিজে কেটে আমার নামে অভিযোগ দিয়েছে। থানার ভেতরে আমি কোনো হামলার চেষ্টা করিনি। এসব মিথ্যা কথা।
পীরগঞ্জ থানার এএসআই মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, জমিজমার বিষয়গুলো আদালতের এখতিয়ারগত বিষয় হলেও এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সার্বিক বিষয়ে আমাদের দেখতে হয়। থানার ভেতরে মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিএনপি নেতা মানিককে অভিযুক্ত করে থানায় অভিযোগ দেওয়ায় তিনি রাগ করে ফরমান আলীকে একটু চার্জ করেছে। যে কি জন্য ওনার নামে অভিযোগ দিয়েছে।
পীরগঞ্জ থানার ওসি এমএ ফারুক জানান, থানার ভেতরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমি দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। বিএনপি নেতা ও তার লোকজন ম্যাপ অনুযায়ী জমি মেপে সমাধান করে নিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু ফরমান আলীর দাবি ঢাকা থেকে ম্যাপ সংশোধন না হয়ে আসা পর্যন্ত জমি মাপলে ওনি ন্যায্য বিচার পাবেন না। দুই পক্ষের একমত না হওয়ায় বিষয়টি সমাধান হয়নি।
মন্তব্য করুন