মেহেরপুরের মুজিবনগরে অনলাইন ক্যাসিনোর মাস্টার এজেন্ট মুরশিদ আলম লিপুর সন্ধানে তার নির্মাণাধীন বাগান বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে সে সময় লিপু বাগানবাড়িতে উপস্থিত না থাকায় অভিযানটি ব্যর্থ হয়।
শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) রাত ১২টার সময় মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর-বিশ্বনাথপুর গ্রামের মধ্যবর্তী সড়কে অবস্থিত বাগানবাড়িটিতে অভিযান চালায় মুজিবনগর থানার ওসি মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল। এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর, ১১ অক্টোবর ও ৮ ডিসেম্বর যৌথবাহিনী ৩ দফা অভিযান চালালেও লিপু থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
মুরশিদ আলম লিপু বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ অনলাইন ক্যাসিনো এজেন্ট হিসেবে স্বীকৃত। ডিএমপির পল্টন থানায় ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে কালবেলাতে অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়ে আসছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর হয়েছে জেলার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। সম্প্রতি মেহেরপুরের পুলিশ সুপার মাকসুদা আকতার খানম কালবেলাকে বলেন, এখন থেকে অনলাইন জুয়ায় সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলবে।
জানা গেছে, বাগানবাড়িতে গত ২ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টার সময় প্রথম দফা অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। লিপুর অনুপস্থিতিতে তখন সেখান থেকে আটজনকে আটক করা হয়। অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটকদের ছেড়ে দেয় যৌথবাহিনী। এরপর গত ১১ অক্টোবর সকালে সেখানে আবারও অভিযান চালায় যৌথবাহিনী।
সে সময় লিপু কৌশলে পালিয়ে যেতে পারলেও গ্রেপ্তার হন মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম ওরফে রফা গাইনের ছেলে ওয়ান এক্স বেটের বিকাশ এজেন্ট চ্যানেল পরিচালনাকারী মো. সাহরিয়ার আজম পরাগ (৩০), একই গ্রামের মো. রায়হানের ছেলে মুস্তাফিজুর রহমান (৩৫) ও মো. আইর উদ্দীনের ছেলে রিপন (২৭) এবং ভবানীপুর গ্রামের উকিল সেখের ছেলে মো. সন্তোষ সেখ (৩২)।
সে সময় তাদের কাছ থেকে অনলাইন জুয়া পরিচালনায় ব্যবহৃত সন্দেহে পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল এবং মাদক উদ্ধার করা হয়। তবে শুধু মাদকের একটি মামলা দিয়ে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে আইনজীবীর মাধ্যমে সে দিনই পরাগ ও রিপন জামিনে মুক্ত হন। তৃতীয় দফা বাগানবাড়িটিতে যৌথবাহিনী নিষ্ফল একটি অভিযান পরিচালনা করে গত ৮ ডিসেম্বর।
খুবই অল্প বয়সে এবং স্বল্প সময়ে প্রচুর বিত্তবৈভবের মালিক বনে যাওয়া মুরশিদ আলম লিপু মেসেঞ্জারের মাধ্যমে কালবেলাকে বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে একটি মহল আমার সঙ্গে বারবার চাঁদাবাজির চেষ্টা করেছে। অসংখ্যবার চাঁদা চেয়ে আমাকে বিভিন্ন প্রকার কথা বলা হয়। আমি কোনো চাঁদা দেইনি। আর প্রয়োজন মনে করিনি, তাই আমি কোনো তথ্যাদিও রাখিনি। তবে আমার ধারণা চাঁদা না পাওয়ার কারণেই একটি মহল প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীকে বারবার আমার বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করছে। আর এভাবে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি তোজাম্মেল আজম কালবেলাকে বলেন, কালবেলায় অনলাইন ক্যাসিনোর ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। তবে ইতোপূর্বে অনেকেই অনলাইন জুয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল। তাদের বিচারের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আইন অনুযায়ী দোষী প্রমাণিত হলে তাদের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, তখন অনেকেই হয়তো এ পথে আসতে নিরুৎসাহিত হবে। একই সঙ্গে টেলিভিশন এবং ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নানা বেটিং অ্যাপসের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সরকারি উদ্যোগে এগুলো বন্ধ করা উচিত। অন্যথায় এই মহামারি বন্ধ করা সম্ভব নয়।
মুজিবনগর থানার ওসি মিজানুর রহমান অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে কালবেলাকে বলেন, মুরশিদ আলম লিপুর গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্রের সন্ধানে শুক্রবার রাতে শিবপুরের বাগানবাড়িতে অভিযান চালানো হয়। তবে লিপু পলাতক থাকার কারণে আমরা সমগ্র বাগানবাড়িটি তল্লাশি করে ফিরে আসি।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর সর্বপ্রথম মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট সিম ব্যবহার করে অনলাইনে জুয়ার কারবারের সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সে সময় গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজন ছিলেন মুরশিদ আলম লিপু। প্রথমবার গ্রেপ্তারের সময় লিপুর সিম থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ লাখ টাকা লেনদেন হতো বলে জানিয়েছিল সিআইডি।
তৎকালীন সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক কামরুল আহসান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিভিন্ন খেলাকে কেন্দ্র করে রাশিয়াভিত্তিক বেটিং ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে জুয়ার কারবার করা হয়। আর লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট সিম। মেহেরপুরের একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন এসআর ও সেখানকার ডিপো ম্যানেজার এ কাজের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলেও জানিয়েছিলেন সিআইডির ঐ কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন