গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দিনমজুর পরিবারের পাঁচ যুবক। স্বপ্ন দেখছিলেন বিদেশ গিয়ে সংসারের অভাব ঘোচাবেন। এজন্য প্রতিবেশী মিলন মিয়ার প্রলোভনে তার পরিবারকে প্রায় ২৩ লাখ টাকা দেন। তারপর কাতারে (বিদেশ) গিয়ে প্রতারণা শিকার হয়ে দেশে ফেরেন যুবকরা। এখন স্বর্বস্বান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের জামুডাঙ্গা গ্রামে দেখা গেছে- পাঁচ যুবক ও তাদের পরিবারের আহাজারির দৃশ্য। বিদেশে (কাতার) গিয়ে প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার হওয়া এই যুবকদের লাখ-লাখ টাকা খুইয়ে এখন তাদের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে।
প্রতারণার শিকার যুবকরা হলেন- জামুডাঙ্গা গ্রামের দিনমজুর খয়বর রহমানের ছেলে ছামিউল ইসলাম (৩০), আলমগীর হোসেনের ছেলে মশিউর রহমান (২১), তাজুল ইসলামের ছেলে পাপুল মিয়া (২৪), মজিদ মিয়ার ছেলে রায়হান মিয়া (২০) ও সেকেন্দার আলীর ছেলে সোহেল রানা (২৯)।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- দামোদরপুর ইউনিয়নের মরুয়াদহ (কিশামত খেজু) গ্রামের বদিয়াজ্জামানের ছেলে মাহাবুর রহমান লিটন কাতার (বিদেশ) গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কর্মে আছেন। এরই মধ্যে প্রায় কয়েক মাস আগে প্রতিবেশী ওই পাঁচ যুবককে কাতারে যাওয়ার প্রলোভন দেন লিটনসহ তার ভাই মিলন মিয়া। আর সরল বিশ্বাসে বদিয়াজ্জামানসহ তার ছেলে মিলন ও মেয়েজামাই ফারুক মিয়াকে ওই যুবকরা প্রত্যেকে সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা করে মোট প্রায় ২৩ লাখ টাকা প্রদান করেন। এরপর লিটন মিয়া ওইসব যুবকদের কাতারে নিয়ে তাদের কাজের বেতন ব্যাপারে প্রতারণা করাসহ শারীরিক নির্যাতন, পাসপোর্ট ব্লক ও স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন ঘটনায় যুবকরা বিভিন্ন কৌশলে দেশে ফিরে আসেন। বর্তমানে লিটন ও তার পরিবারের কাছে প্রতারণার শিকার হয়ে দুর্বিষহ দিনাতিপাত করেছে এসব যুবক। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে লিটনসহ বজিয়াজ্জামান গংদের কাছে টাকা ফেরত চাওয়ায় তারা উল্টো যুবকদের হুমকি দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সোহেল রানা ও ছামিউল ইসলামসহ অন্যান্য যুবকরা কালবেলাকে জানান- তারা বিদেশ (কাতার) যাওয়ার জন্য প্রতিবেশী বদিয়াজ্জামান গংদের প্রায় ২৩ লাখ টাকা দিয়েছেন। এরপর তাদের মাধ্যমে কাতারে গিয়ে লিটনের প্রতারণার শিকার হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। এখন বদিয়াজ্জামান গংদের কাছে টাকা ফেরত চাইলেও তা দিচ্ছে না। এ বিষয়ে থানা, সেনা ক্যাম্প ও ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেন তারা।
এ বিষয়ে ছাত্তার মিয়া ও মতিন মিয়া নামের স্থানীয় শিক্ষক বলেন, বদিয়াজ্জামানের ছেলে মাহাবুর রহমান লিটন বিদেশে (কাতার) আছেন। কাতারে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তিনি পাঁচজন যুবকের কাছে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছেন। এই ছেলেদের সঙ্গে লিটন মিয়া প্রতারণা করায় যুবকরা বাড়ি ফিরেছে। এর একটি সুষ্ঠু সমাধা হওয়া দরকার।
এদিকে অভিযুক্ত মাহাবুর রহমান লিটন কালবেলাকে বলেন, ওই যুবকরা ফ্রি ভিসায় কাতারে এসেছেন। সেখানে কাজের বেতন কম থাকায় তারা দেশে ফিরেছেন। এজন্য আমি দায়ী না।
এ বিষয়ে দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন