রংপুরের পীরগঞ্জে কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের আড়তে অভিযান চালিয়ে ৯৯ হাজার ৭০০ টাকা, ছয়টি মোবাইল কেড়ে নিয়ে মারধরের পর থানায় নিয়ে জুয়ার মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের এসআইয়ের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। পরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এতে সড়কে শতাধিক গাড়ি আটকা পড়ে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের কলাবাগান (শুকানচৌকি) বাজারে মানববন্ধন শেষে মহাসড়কের একদিকে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় বক্তব্য দেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম, আবু তাহের, নালো মিয়া, স্থানীয় বাসিন্দা একরামুল হক, দেলোয়ারা বেগমসহ অনেকে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে পীরগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই মশিউর ও এএসআই জুয়েল রানাসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য রাত দেড়টার দিকে ব্যবসায়ী রাশেদুল ও সাজুর আড়তঘরে ঢোকেন। এ সময় পেঁয়াজ ও কচুরমুখীর বীজ লোড-আনলোড শেষে সাতজন ব্যবসায়ী হিসাব-নিকাশ করছিলেন। পুলিশ সদস্যরা তল্লাশি চালান এবং যার কাছে যা কিছু আছে দিতে বলেন। এ সময় জোর করে আড়তদার রাশেদুল ইসলামের ১০ হাজার ৫০০, বাক্সে রক্ষিত ৮ হাজার ৫০০, সাজু মিয়ার ১২ হাজার ৩০০, ব্যবসায়ী আবু তাহেরের ১৫ হাজার ৪০০, মিলন মিয়ার ১৩ হাজার ৭০০, বিলু মিয়ার ১৭ হাজার ৩০০, রবিউল ইসলামের ৭ হাজার, নালো মিয়ার ১৫ হাজার টাকাসহ মোট ৯৯ হাজার ৭০ টাকা ও ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো কেড়ে নিয়ে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় দেন।
এর মধ্যে নালো মিয়া কৌশলে ঝাঁপ খুলে পালিয়ে যান। বাকি ছয়জনকে আটক করে থানায় এনে জুয়া খেলার অপরাধে এসআই মশিউর বাদী হয়ে মামলা করে আদালতে পাঠান। মামলার জব্দ তালিকায় ৯ হাজার ৮৭০ টাকা উল্লেখ করলেও বাকি ৮৯ হাজর ৮৩০ টাকা ও মোবাইল ফেরত দেয়নি পুলিশ।
ওই এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, ইদানীং পুলিশ বিভিন্নভাবে মানুষকে হয়রানি করছে। এলাকায় মাদকে ছড়াছড়ি অথচ মাদক কারবারিদের আটক না করে সেবনকারীকে মাঝেমধ্যে গ্রেপ্তার করে থানায় নেওয়ার পথে টাকার বিনিময়ে মাঝপথে ছেড়ে দেয়।
তারা আরও জানান, রাশেদুলসহ ভুক্তভোগীরা এলাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, তাদের জুয়ার মামলায় ফাঁসিয়ে টাকা মেরে দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। দ্রুত মামলা প্রত্যাহার, কেড়ে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়াসহ অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবি জানান। মহাসড়ক অবরোধকালে মহাসড়কের এক পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ বিষয়ে এসআই মশিউর জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগে জুয়া খেলার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই ঘরে অভিযান চালানো হয়। এখন তারা পুলিশের বিরুদ্ধে বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করছে।
এএসআই জুয়েল রানা জানান, তাস দিয়ে জুয়া খেলা অবস্থায় হাতেনাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত আছে। টাকার পরিমাণ যা ছিল, তা জব্দতালিকায় দেখানো হয়েছে। বাড়তি টাকার বিষয়টি সত্য নয়।
ওসি এমএ ফারুক জানান, তাস দিয়ে জুয়া খেলার অপরাধে এসআই মশিউর ও এএসআই জুয়েল রানা অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। জুয়া আইনে নিয়মিত মামলার পর তাদের আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশ সদস্যরা কোনো অপরাধ করলে তার দায়ভার নেব না; বরং শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
রংপুরের পুলিশ সুপার আবু সাইম জানান, জুয়া বর্তমানে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ জুয়ার বিরুদ্ধে অপারেশন চালিয়েছে।
মন্তব্য করুন