বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আজ সময় এসেছে, পরিবর্তিত হয়েছে অবস্থার। স্বৈরাচার এই দেশ থেকে বিদায় হয়ে গেছে, পালিয়ে গেছে। যদিও স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা এখনো দেশের আনাচে কানাচে লুকিয়ে আছে। তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করছে। তারপরও আমাদের একটি সুন্দর দেশ গড়তে হবে।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার আগে নীলফামারীর লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দুবাছড়ি মাদ্রাসা মাঠে আমরা বিএনপি পরিবার আয়োজিত র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানীর পরিবারের জন্য নবনির্মিত বাড়ির চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভ্যার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, একজন সাধারণ মানুষ নিজের দেশ সম্পর্কে যা চিন্তা করে, যা কল্পনা করে সেরকম একটি দেশ আমাদেরকে গড়ে তুলতে হবে। দেশে বহু মানুষ আছে, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ আছেন। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আছেন। বিভিন্ন জন মানুষের বিভিন্ন মতামত আছে। আমরা সেই মতামতগুলো আলোচনা করব। সবাই সবার মতামত উপস্থাপন করবে। কিন্তু দিন শেষে যেই মতামতের পক্ষে সবচাইতে বেশি সমর্থন থাকবে সেই মতামতের ভিত্তিতেই আমরা দেশকে গড়ে তুলব। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
তিনি আরো বলেন, গোলাম রাব্বানী শুধু একজন নয়, গত ১৫ বছরে সারা বাংলাদেশে এই রকম হাজারো গোলাম রাব্বানীকে হত্যা করেছে এবং লক্ষ লক্ষ পরিবারকে নির্যাতিত করেছে পলাতক স্বৈরাচার। এমনকি পালিয়ে যাবার এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রায় ২০ হাজারের মতন মানুষকে হত্যা করেছে। ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রায় ত্রিশ হাজারের কাছাকাছি মানুষকে সে বিভিন্নভাবে জখম করেছে, বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছে।
দেশ গড়ার জন্য তিনি সবাইকে একত্রিত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি। দেশে বহু মানুষ আছে। বিভিন্ন জনের বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ আছেন। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আছেন। বিভিন্ন জন মানুষের বিভিন্ন মতামত আছে। আমরা সেই মতামতগুলো আলোচনা করব। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভি বলেছেন, আজকে মানুষের প্রত্যাশার একটি পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়েছে। এই সরকারকে বিএনপিও সমর্থন করেছে। কিন্তু এই সরকার যদি কোনো একটি দিকে হেলে যান, তাহলে এই সরকারকে জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। তাকে যে নিরপেক্ষতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই নিরপেক্ষ দায়িত্ব তিনি পালন করবেন।
দেশের অর্থনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, মুদ্রা সংকোচন নীতি নিয়েছেন ভালো কথা। কিন্তু কমানোর জন্য কিন্তু এমন সংকোচন নীতি নিয়েন না যে, ব্যাংক থেকে যদি মানুষ টাকা না পায় তাহলে ব্যবসা বাণিজ্য করবে কী করে? একটা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে হবে। অবাধে যেন টাকা পাচার না হয় সেটাও দেখতে হবে। আবার মানুষ যাতে টাকা পেতে পারে সেই ব্যবস্থাটা তো করতে হবে। সেটি না করলে তো মানুষ কষ্টের মধ্যে থাকবে।
তিনি বলেন, আমাদের ছাত্ররা সংবিধান বাতিল করে দিতে চায়। আমার মনে প্রশ্ন জাগে, আমি যে দলটি করি, ওই দলের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। যিনি দেশবিদেশে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। জনগণের কাছে, যারা ইতিহাস লেখক তাদের কাছে স্বীকৃত। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক। যে সংবিধান বাতিল করে দেশের সংবিধান রচনা করেন। কী করবেন আপনারা?
আমরা বিএনপি পরিবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংগঠনে আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা দেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) আসাদুল হাবিব দুলু, পল্লি উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহসম্পাদক প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আ.খ.ম আলমগীর সরকার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম, নিহত বিএনপি নেতা গোলাম রাব্বীর মেয়ে রহমত জাহান রিক্তাসহ স্থানীয় নেতারা।
একই অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নীলফামারী, পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার ১২ শহীদ পরিবারে অর্থসহযোগিতা প্রদান করা হয়। প্রতি পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা করে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি ভোরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ঠনঠনিয়া গ্রামের মামা আলি হোসেন ও মিয়া হোসেনের বাড়ি থেকে গোলাম রব্বানীকে তুলে নিয়ে যায় র্যাব। এরপর ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি সকাল সাতটায় নীলফামারী সদর উপজেলার পলাশবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের অদূরে নীলফামারী-ডোমার সড়কে গোচামারী ব্রিজের পাশ থেকে তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার হয়। নিহত গোলাম রব্বানী নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
মন্তব্য করুন