কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা থেকে তিনটি অসুস্থ হিমালয়ান গৃধিণী শকুন উদ্ধার করা হয়েছে। ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশ ও তীর নামের দুটি সংগঠনের সদস্যরা মহাবিপন্ন প্রজাতির এ শকুনগুলোকে উদ্ধার করে।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার গঙ্গারহাট এলাকার নীল কুমোর নদীর পাড়ে বিশাল আকৃতির একটি হিমালয়ান গৃধিনী শকুনকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। অসুস্থ শকুনটিকে ধরে নিয়ে গিয়ে পায়ে রশি লাগিয়ে বেঁধে রাখা হয়। পরে খবর পেয়ে ‘ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশ’ টিমের সদস্যরা সেখানে ছুটে যান। তারা শকুনটিকে উদ্ধার করে রংপুরে এনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।
পরে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে শকুনটিকে পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠানোর আগে রংপুর কারমাইকেল কলেজে আনা হয়। খোলা প্রাঙ্গণে পাখিকে দেখতে ক্যাম্পাসে ভিড় জমায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। বিশাল আকৃতির পাখিটির সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে শিশুরাও।
এদিকে গাইবান্ধা থেকে আরও দুটি শকুনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনটি শকুনই বিকেলে একসঙ্গে দিনাজপুরে অবস্থিত দেশের একমাত্র শকুন পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিজেন আহমেদ প্রান্ত বলেন, পরিযায়ী এ শকুনটিকে রোববার বিকেলে উদ্ধার করা হয়েছে। দীর্ঘ ভ্রমণ করায় শকুনটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। গাইবান্ধা থেকে আরও দুটি শকুন উদ্ধার হয়েছে। এগুলোকে বিকেলে একসঙ্গে দিনাজপুর শকুন পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ১৭ ডিসেম্বর পীরগাছার অন্নদানগর ও পরদিন লালমনিরহাট থেকে বিপন্নপ্রায় এ প্রজাতির দুটি শকুন উদ্ধার করেছে সংগঠনটির সদস্যরা। পরে সেগুলোকে চিকিৎসার জন্য পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
জানা যায়, পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দেশগুলো থেকে নিরাপত্তা ও খাদ্যের লোভে যেসব পরিযায়ী পাখি পরিযান করে থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম ‘হিমালয়ী গৃধিনী’ (Himalayan Griffon Vulture)। প্রতি বছর শীতকালে এই শকুনগুলো পরিযায়ন করে বাংলাদেশের সমতল ভূমিগুলোতে চলে আসে।
বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা জানান, পৃথিবীতে দ্রুততম বিলুপ্ত হতে চলা প্রাণী শকুন। তাই শকুনমাত্রই বিশ্বে ‘মহাবিপন্ন’ (Critically Endangered)। বাংলাদেশে শকুনের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আইইউসিএনের হিসেবে বাংলাদেশে মাত্র ২৬৮টি শকুন রয়েছে।
জোহরা মিলা বলেন, পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ও কেটোপ্রোফেনের ব্যবহার, খাদ্য সংকট এবং বাসস্থান সংকটসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে প্রকৃতির ঝাড়ুদার হিসেবে পরিচিত এই পাখিটি হারিয়ে যাচ্ছে। শকুন বিলুপ্ত হয়ে গেলে সুন্দর একটি পাখি হারানো পাশাপাশি দেশের মানুষ অ্যানথ্রাক্স, জলাতঙ্কসহ পশু থেকে সংক্রামক রোগের ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়বে। আইইউসিএনের মাধ্যমে বন অধিদপ্তর শকুন রক্ষায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাখিটির প্রতি আমাদের সদয় হওয়া খুবই প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন