উচ্চশিক্ষা অর্জন যে কোনো শিক্ষার্থীদের দেখা বড় স্বপ্নগুলোর একটি। তবে এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া খুব সহজ নয়। আবার জেলায় নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের গড়ে ওঠাও স্থানীয়দের জন্য পরম পাওয়া। অথচ দুই বছর আগে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পাওয়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নওগাঁবাসীর কপালে জোটার পরও স্থান নির্বাচন নিয়ে শুরু হয় টানাহেঁচড়া। এ কারণে আজও দৃশ্যমান হয়ে ওঠেনি উত্তরের নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী অবকাঠামো।
প্রায় দুই বছর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ বিল পাস হলেও নানা জটিলতায় আটকে আছে স্থান নির্ধারণ। কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়টির নেই স্থায়ী ক্যাম্পাস। শুরু হয়নি একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রম। উপাচার্য (ভিসি) ও কর্মকর্তা নিয়োগ ছাড়া নেই কোনো অগ্রগতি। এর মধ্যে নওগাঁবাসী ও শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাজ দ্রুত শুরু করতে চান নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাছানাত আলী। দ্রুত স্থান নির্ধারণ করে একটি আধুনিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার দাবি নওগাঁবাসীরও।
জানা যায়, ২০১৮ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাছে জেলাবাসীর পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ও অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়। ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এ-সংক্রান্ত বিলের খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। পরের বছর ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়’, নওগাঁ বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। ৮ জুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদকে প্রথম উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। সে সময় দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরও ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ দুই বছরেও স্থান নির্ধারণ হয়নি। এর কারণ হিসেবে অনেকে বলছেন তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও নেতার স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা দায়ী।
এদিকে একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু ও স্থান নির্ধারণ না হওয়ায় হতাশ শিক্ষাবিদসহ শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর দাবিতে মানববন্ধন করেন ছাত্র-জনতা।
রাজশাহী কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব বলেন, নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকলে অন্য জেলায় গিয়ে পড়াশোনা করা লাগত না। নিজ এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে গর্ববোধ করতাম, অন্যদিকে সাশ্রয় হতো মেস ভাড়াসহ অনেক খরচ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম ফজলে রাব্বী কালবেলাকে বলেন, আমাদের গর্বের বিষয় আমরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছি। আমরা চাই, উপযুক্ত স্থান দেখে সংশ্লিষ্টরা পদক্ষেপ নেবেন। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচিতে যাব।
কমিউনিস্ট পার্টির নওগাঁ সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলিমুর রেজা রানা বলেন, আগের সরকারের নেতাকর্মীদের টানাহেঁচড়ার কারণে আজও পূর্ণাঙ্গরূপে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা যায়নি। দ্রুত উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করা হোক।
নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ শরিফুল ইসলাম খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি, যা নওগাঁবাসীর জন্য দুঃখজনক। একটি বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখে, মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করে।
বর্তমানে শহরের বালুডাঙ্গা এলাকায় নওগাঁ মডেল টাউনে একটি ভাড়া বাড়িতে স্বল্প পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গত ৭ অক্টোবর দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ড. হাছানাত আলী।
ভিসি হাছানাত আলী কালবেলাকে বলেন, ভিসি হিসেবে এখানে আসা তখনই আনন্দের হবে যখন নওগাঁবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই বিশ্ববিদ্যালয় দৃশ্যমান করতে পারব। সেই ভিশন নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে প্রথম ধাপ হিসেবে গত ১৭ অক্টোবর ৬টি বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বরাবর আবেদন করেছি। গত ১২ নভেম্বর পূর্বের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় নাম পরিবর্তন করে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণের জন্যও আবেদন করেছি। সবকিছু এখন নির্ভর করছে ইউজিসি ও সরকারের অনুমোদনের জন্য।
জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ কালবেলাকে বলেন, নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম চালুর বিষয়ে আলোচনা শেষ হয়নি। যেখানে কোনো রকম কোর্স চালু হয়নি বা শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি, তাদের বিষয়ে সরকার কী ভাবছে এটা মাথায় রেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
মন্তব্য করুন