জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেছেন, একই পণ্য নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আলাদা আলাদা বিভাগ আলাদা রকমের রিপোর্ট দেওয়ার কারণে দেশীয় উৎপাদনের সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। তখন আমদানিও ঠিকমতো হয় না। এর ফলে বাজারে পণ্যের সংকট হয় এবং দাম বেড়ে যায়।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহীতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, ‘খাদ্যের ক্রাইসিস হয় তখন, যখন ডিমান্ড এবং সাপ্লাইয়ের ভারসাম্য থাকে না। আলু নিয়ে দেখেছি কৃষির তিনটা বিভাগ তিন রকমের তথ্য দিয়েছে। মিনিস্ট্রিতে একটা আলাপে দেখেছি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যে রিপোর্ট দিয়েছে সেটার সঙ্গে কৃষি বিপণনের তথ্যের মিল নেই। এ দুটি অধিদপ্তরের সঙ্গে কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তথ্যের মিল নেই। এটা দিয়েছে ঢাকার এসবি অফিস। এটা যদি হয়, আমরা বিপদে আছি।’
রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে তিনি বলেন, ‘ডিসি সাহেবকে বলব, আপনার জেলায় কৃষি বিভাগকে বলেন, আমি একটা রিপোর্ট চাই। সেটার ওপর আমরা রাজশাহীকে বিশ্বাস করব, অন্য রিপোর্ট চাই না।’ কৃষি মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে, আপনারা একটা অভিন্ন রিপোর্ট দেন যাতে করে আমরা এলসি খুলতে পারি। এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই আমদানি হবে।’
তিনি বলেন, ‘একটা পণ্য বিদেশ, ইউরোপ-আমেরিকা থেকে পণ্য আনতে গড়ে দুই-তিন মাস সময় লাগে। তাহলে আমরা চার-পাঁচ মাস আগে জানতে পারলে আমদানি করতে পারব। ক্রাইসিস মেমোন্টে জানলে ক্রাইসিস দূর হবে না। আমরা বর্তমানে সে অবস্থায় পড়েছি।’
দ্রুত আমদানি করতে গিয়ে খারাপ পণ্য নিতে হয় জানিয়ে ভোক্তার ডিজি বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানির পর দেখা গেল এক-তৃতীয়াংশ পেঁয়াজ নষ্ট। আমরা ক্রাইসিস মেইনটেন করার জন্য ওই পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছি। এই কারণে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল, তখন টু-থার্ডকে পুরো এক ধরে, একশর মধ্যে ৩০ ভাগ নষ্ট হলেও তাকে আমরা একশ ধরে মূল্য নির্ধারণ করছি। পেঁয়াজের দুটো অংশ ছিল, একটা অংশ প্রায় ভেজা পেঁয়াজ আসত। আমি নিজে হাত দিয়ে ধরে দেখেছি। এগুলো জনগণের জন্য পজিটিভ নয়।’
তিনি আরও বলেন, রংপুরের ময়নাকুটির কোল্ডস্টোরেজ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে বাধ্য করেছেন। রাজশাহীতে পবার ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) ৪৫ টাকা দরে আলু বিক্রি করতে বাধ্য করেছেন। রাজশাহীতে ৪০টি কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। রাজশাহীর নয় উপজেলার মধ্যে একটি মাত্র উপজেলা এমন দামে আলু বিক্রি করতে পারলে, এটাকে আমরা অন্য উপজেলাগুলোর সঙ্গে এক কাতারে বিবেচনা করতে পারি না।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এখনো পুরানো সংস্কৃতিটা পুরোপুরি পরিবর্তন হয়নি। গত মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদে (স্থলবন্দর) গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখেছি পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিতে যে আমদানি হচ্ছে তার মধ্যে ওয়ান থার্ড (তিন ভাগের এক ভাগ) পেঁয়াজ নষ্ট। কিন্তু আমরা তখন পেঁয়াজের ক্রাইসিস (সংকট) মেনটেইন (উত্তরণ) করার জন্য এই পেঁয়াজটাই কিনতে বাধ্য হচ্ছি। এ কারণে পেঁয়াজ যে পরিমাণের আমদানি করা হয়েছিল পরে মূল্যের ক্ষেত্রে ১০০ ভাগের মধ্যে ৩০ ভাগ নষ্টের পরও বাকিটাকে ১০০ করে ধরে মূল্য হয়েছে। ফলে মূল্য কোনোভাবে কমানো যায়নি। এই পেঁয়াজগুলোর দুটি অংশের মধ্যে একটা অংশ প্রায় ভেজা আসত। এগুলো আমাদের জনগণের জন্য কোনোভাবেই পজিটিভ না।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জামিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন- রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খোন্দকার আজিম আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ক্যাবের রাজশাহী জেলা সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন। এ সময় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও ব্যবসায়ী প্রতিনিধির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন