বাংলাদেশে নদী ও খাল থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন ব্যাপক হারে বাড়ছে। এতে পরিবেশগত বিপর্যয়ের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের জীবিকা ও নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ বালু উত্তোলন দেশীয় পরিবেশ, কৃষি জমি এবং জলজপ্রাণীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলায় শাকবাড়িয়া নদী থেকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি কোনো বালুমহাল না থাকলেও এমভি মা-বাবার দোয়া নামের একটি কার্গো জাহাজ নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। যার ফলে হুমকির মধ্যে পড়েছে নদী রক্ষা বাঁধ ও ফসলি জমি।
প্রশাসনের নাকের ডগায় ৪-৫টি স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হলেও যেন দেখার কেউ নেই। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন নদী তীরবর্তী এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কয়রা ও বেদকাশী ইউনিয়নের ৪নং কয়রা, ৬নং কয়রা কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র এলাকা, কাটকাটা, হরিহরপুরনামক স্থানে নদীতে কোনো চর না থাকলেও ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রাতের আঁধারে দেদার বালু উত্তোলন ও বিক্রয় করা হচ্ছে। পরে সেই বালু আবার বস্তায় (জিও ব্যাগ) ভরে নদীতে বিভিন্ন স্থানে ফেলাসহ অনেক স্থাপনায় ভরাটের কাজে ফেলা হচ্ছে। খনন করে বালু উত্তোলনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ইজারাদাররা তা কোনোভাবেই মানছেন না। কেওড়াকাটা পর্যটন এলাকাসহ বাঁধের কাছ থেকে বালু খনন করার কারণে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে এলাকার নদী রক্ষা বাঁধ।
শাকবাড়িয়া নদী তীরবর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র এলাকা সংলগ্ন শাকবাড়িয়া নদী থেকে অবৈধ বালু তোলা হচ্ছে যেটা পর্যটন এলাকার জন্য প্রভাব পড়বে। তবে ভাঙন কবলিত এসব স্থান থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপ যথেষ্ট কার্যকর হচ্ছে না। কারণ অবৈধ বালু তোলার পেছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী চক্র। এই চক্রের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তাসহ অনেকে। তারা অবৈধ বালু তোলার মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় প্রশাসন মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে অভিযান চালালেও অবৈধ এ কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে না। এ অবস্থায় নদী তীরের বেড়িবাঁধ ও আবাদি জমিগুলো ভাঙনের কবলে পড়ছে। জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় কৃষকরা পড়েছেন বেকায়দায়।
উল্লেখ্য, সুন্দরবনসংলগ্ন নদ-নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নজরে আসায় আমলে নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় পিবিআইকে। পরে পিবিআই তদন্তপূর্বক হারুন গাজীসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের পর তা আমলে নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালত সমন জারির আদেশ করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এমভি মা-বাবার দোয়া কার্গো ড্রেজার মালিক মো. হারুনার রশিদ কালবেলাকে বলেন, কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের পাশ থেকে কোনো বালু উত্তোলন করা হচ্ছে না। তবে পাশের কাটকাটা থেকে বালু উত্তোলন করে খলিলকে দেওয়া হচ্ছে। শাকবাড়িয়া নদীর কাটকাটা থেকে বালু উত্তোলন করার অনুমতি রয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি নেই। পুনরায় কেউ বালু উঠাচ্ছে কিনা জানা নেই। তবে এক্ষুনি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
মন্তব্য করুন