জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারের দাম বেশি হওয়ায় চলতি মৌসুমে আমন ধান-চাল সংগ্রহ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মৌসুমে চাল সংগ্রহের শুরু থেকেই ধান ও চালের বাজার বেশি হওয়ায় চালকলের মালিকরা খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহে গড়িমসি করছেন। এতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংগ্রহ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কয়েকজন মিল মালিকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দুই থেকে তিন টাকা ভর্তুকি দিয়েও আমরা চাল কিনতে পারছি না। এ মৌসুমে সরকার ধানের দাম প্রতি কেজি ৩৩ টাকা এবং চালের দাম প্রতি কেজি ৪৭ টাকা নির্ধারণ করেছে।
মৌসুমের শুরুতে ধানের যে দাম ছিল, তখন চালকলের মালিকরা গোডাউনের চাল দিতে পারতেন। কিন্তু বর্তমান বাজারে ধানের যে দাম, তাতে চাল উৎপাদন করে সরকার বেঁধে দেওয়া দামে চাল খাদ্যগুদামে সরবরাহ করলে বিপুল পরিমাণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। বর্তমান সুমুন ও গুটি স্বর্ণাসহ মোটা জাতের ধানের বাজার ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪৮০ টাকা দরে বেচাকেনা করতে কলেজ হাটসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে। এই দামে ধান কিনে চাল উৎপাদন করলে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে তিন থেকে চার টাকা বেশি খরচ হবে।
আক্কেলপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার এ উপজেলা আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ৭৩৭ টন এবং চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ৫৩৮ টন নির্ধারণ ছিল। চাল সরবরাহ করার জন্য মাত্র ১৩ জন মিলার চুক্তিবদ্ধ করেছেন ২১৫ টন। ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধান ১০০ টন ও চাল ১৪০ টন সংগ্রহ হয়েছে। এ উপজেলায় ৪১টি চালকলের মধ্যে ১৩টি চালকল মালিক সরকারি খাদ্যগুদামে চাল দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ করেছে। ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চাল সংগ্রহ অভিযান চলবে।
সরেজমিন গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কৃষক রাশেদুল ইসলাম পাইলটের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার নির্ধারিত ধানের দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি। বর্তমান স্বর্ণ পাঁচ জাতের ধান বাজারে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫২০ টাকা পর্যন্ত প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে। এই কারণে খাদ্যগুদামে ধান দেওয়া যায়নি।
ধান ক্রেতা ব্যবসায়ী শ্রীবাস ঘোষ বলেন, বর্তমান বাজারে ধানের দাম বেশি। কৃষকরা ভালো দামে ধান বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
মাহিন চালকলের স্বত্বাধিকারী মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার মিলের নামে বরাদ্দকৃত ৮৮ টন চাল সরকারকে দেওয়ার জন্য চুক্তিপত্র করেছিলাম। প্রায় ২ লাখ টাকা লোকসান মাথায় রেখে সব চাল খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেছি।
উপজেলার চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মো. এ কে এম শাখাওয়াত হোসেন খায়ের বলেন, এ মৌসুমে প্রথম থেকে ধানের ক্রয়মূল্যে ঊর্ধ্বমুখী। কয়েক বছর ধরে ধানের ক্রয়মূল্যর সঙ্গে উৎপাদিত চালের ক্রয়মূল্যের কোনো মিল নেই। বিগত বছরের তুলনায় উৎপাদিত চালের দাম বেশি হওয়ায় মিল মালিকরা সরকারকে চাল দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। যেসব মিল মালিক সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন, তারা চাল সরবরাহ করলে বর্তমান বাজার অনুযায়ী লোকসান পোহাতে হবে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শাহানশাহ হোসেন বলেন, ধান ও চালের দর বেড়ে যাওয়ায় চলতি মৌসুমে ধান সংগ্রহ নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত। তবে আমি আশাবাদী, চাল সংগ্রহের জন্য চুক্তিবদ্ধ মিলাররা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করবেন। এর পরও মিলাররা যদি চাল না দেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব মিলার চুক্তিবদ্ধ হননি, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে কৃষকদের খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন