চাঁদপুরসহ সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জাহাজ ধর্মঘট দিয়েছে পণ্যবাহী লাইটার জাহাজ শ্রমিকরা। জাহাজে সেভেন মার্ডারের ঘটনায় মো. ইরফান (২৬) ছাড়াও আরও খুনি রয়েছে দাবি করে তাদেরকে অতিদ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে এ ধর্মঘট ডাকা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১২টা ১ মিনিট হতে এই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরুর কথা কালবেলাকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা মো. হারুনুর রশিদ।
তিনি বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ঢাকা চাঁদপুর লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনেরও সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
মো. হারুনুর রশিদ বলেন, আপাতত আজ রাত বারোটার পর থেকে পণ্যবাহী লাইটার জাহাজ শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হবে। যে যেখানে আছে সেখানেই থাকবে। জাহাজ চলাচল করবে না। লোডিং আর আন লোডিং বন্ধ থাকবে। তবে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলবে ঢাকা, বরিশাল ও চাঁদপুরসহ অন্য রুটে। এরপর আমাদের দৃষ্টি থাকবে অন্য আসামি ধরা হচ্ছে কিনা। চট্টগ্রাম বন্দর, মোংলা বন্দর, বাঘাবাড়ি, আশুগঞ্জে ধর্মঘট নিয়ে অপ্রীতিকর কোনো কিছু ঘটলে সারাদেশে নতুন কর্মসূচি আসবে।
তিনি বলেন, খুনিদের দ্রুত গতিতে ধরে আইনের আওতায় আনার দাবিতে এই নৌ ধর্মঘট হবে। যার কথা উঠেছে মো. ইরফান, যদি সে জাহাজে উঠে এবং সবাইকে মারে, তাহলেও কি করে সম্ভব লস্কর পদে থেকে ৫-৬ মাস কাজ করে ইঞ্জিন স্টার্ট দেওয়া। এটা কোনো মতেই সম্ভব নয়।
তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে গিয়ে বলেন, যদি মেনেও নেই ওই ইরফান ইঞ্জিন একাই স্টার্ট দিল, সে কী করে আবার গ্রিজও কন্ট্রোল করলো! আবার ২-৩ ঘণ্টা জাহাজও চালালো এবং খালেও নিয়ে গেল! আবার নোঙর উঠিয়েছে। নোঙর উঠিয়ে জাহাজ আবার খালে নিয়ে এঙ্কার করছে। একজন ব্যক্তির পক্ষে কি করে এতো কাজ একা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, একটি জাহাজে গ্রিজ ও ইঞ্জিনে অনেক লোকের প্রয়োজন। জাহাজের অন্যান্য কাজেও কয়েক জন লোক লাগে। এই লোকগুলো ছাড়া জাহাজ চালানোর কাজ একা ইরফান কী করে সম্পন্ন করবে? একজনের পক্ষে এসব কি সম্ভব- এটা নৌযান নেতারা মানতে নারাজ।
মো. হারুনুর রশিদ আরও বলেন, এর আগে নৌ পুলিশ বললো মোবাইলসহ সব কিছুই উদ্ধার হয়েছে, কিছুই নেয়নি। এখন র্যাব দিয়ে জজ মিয়ার নাটক সাজালো কেন?
তিনি হাস্য কৌতুক করে বলেন, গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে দেখলাম- র্যাব একজন দিয়া জাহাজ চালালো, তাও আবার সে জাহাজের ক্যাপ্টেন বা মাস্টার না। যেই জজ মিয়ার নাটক সাজানো হলো এটা খুবই দুঃখজনক। উলটো নৌযান শ্রমিক নেতাদের উত্তেজিত করে দিল এই নাটকটি সাজিয়ে।
আহত জুয়েল উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে না দাবি করে হারুন বলেন, জুয়েলকে দেখতে সরকারের একজন উপদেষ্টাও এখন পর্যন্ত যায়নি। সে ভালো কক্ষও পায়নি। এতো বড় একটা ঘটনায় কোনো উপদেষ্টা জুয়েলকে দেখতে না যাওয়ায় আমরা হতাশ। যদি ইরফান খুনিও হয়। ওর সঙ্গে আরও খুনি আছে এবং ওগুলোকে ধরছে না কেন?
কর্মসূচি প্রসঙ্গে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের এই নেতা বলেন, রাত ১২টা থেকে মালবাহী ট্যাংকার, কোস্টার সব বন্ধ থাকবে। সরকার গড়িমসি বা বিলম্ব করলে যাত্রীবাহী জাহাজগুলোর সংগঠনও যেকোনো সময় এই ধর্মঘটের একাত্মতা পোষণ করার আভাস দিয়েছে। তবে এখন যাত্রীবাহী নৌযানগুলো নৌপথে চলবে।
এর আগে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা হারুন জাহাজে খুন হওয়া ৭ জনের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ, রাষ্ট্রীয় শহীদী মর্যাদায় দাফন এবং নৌযানগুলোর নিরাপত্তার দাবিতে চাঁদপুর নৌথানা প্রাঙ্গণে নেতাকর্মী নিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া রক্তমাখা চাইনিজ কুড়ালের ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং গ্রেপ্তারকৃত ইরফানের ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলেছে কিনা তা এখনো গণমাধ্যমকে জানায়নি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও ইরফান একা জাহাজ চালাতে কতটা পারদর্শী সেটাও সরাসরি গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেনি কেউ। এর আগে এ ঘটনায় ৮-১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা করেছেন জাহাজ মালিক মাহাবুব মোর্শেদ।
মন্তব্য করুন