ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় গর্তে ঢুকিয়ে শারমিন বেগম নামে এক নারীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সেই হত্যাকাণ্ডের আসল কারণ জানা গেছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
চুরি করা রাজাহাঁস রান্না করে দিতে রাজি না হওয়ায় শারমিন বেগমকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের দুই মেয়ে। এর আগেও অনেকবার অভিযুক্ত ফারহান রনি হাঁস চুরি করে নিয়ে ওই নারীকে দিয়ে রান্না করেছে বলে তারা জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নিহত শারমিন বেগম ও তার স্বামী নুরুল ইসলাম গত ৪০ বছর ধরে শাহনেওয়াজ ভুঁইয়ার হীরাপুর গ্রামের একটি জায়গায় মাটির ঘর করে বসবাস করেন। আগে শাহনেওয়াজ ভুঁইয়ার বাড়ির কাজকর্ম করতেন। এখন ভিক্ষাবৃত্তি ও মানুষের বাড়িতে কাজ করে দিনাতিপাত করে। তার তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে সন্তান নাই। গত রাতেও শারমিন বেগম ঘরেই ছিলেন। ভোরে ফারহান রনি তার মা অসুস্থ বলে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর নারীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, উপজেলার গাজীর বাজার এলাকার এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে রাজহাঁস চুরি হয়। মঙ্গলবার সকালে এনামুল ও রোমান নামে দুই ভাই তাদের হাঁস খুঁজতে শাহনেওয়াজ ভুঁইয়ার বাড়ি গেলে পরিত্যক্ত টিনের ঘর থেকে ধোঁয়ার উঠতে দেখে তারা। তখন সেখানে থাকা ফারহান রনিকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ঘরে পাতা পুড়িয়েছেন তিনি। এ কথায় বিশ্বাস না হলে এনামুল, রোমান ও তাদের চাচাতো ভাই উবায়দুল ঘরের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলে ফারহান তাদের মারার হুমকি দেয়। এতে সন্দেহ হলে গ্রামের লোকজন নিয়ে ঘরে গেলে গর্তে পুড়তে থাকা লাশ দেখতে পায় সবাই। তখন পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে মাটি খুঁড়ে লাশ বের করে।
তারা আরও জানান, সমস্ত শরীর পুড়ে যাওয়ায় এবং দেহে মাথা না থাকার কারণে প্রথমে মরদেহের লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পারেনি পুলিশ। পোড়া হাতে চুড়ি থাকায় দেহটি কোনো নারীর বলে ধারণা করা হয়।
নিহতের বড় মেয়ে রুমা ও মেঝ মেয়ে জিমা বলেন, ফারহান রনির মা অসুস্থ বলে নিহত শারমিন বেগমকে ডেকে নিয়ে চুরি করা রাজাহাঁস রান্না করে দিতে বলেন। এতে রাজি না হওয়ায় ফারহান রনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের মাকে মারধর করে নৃশংসভাবে জবাই করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এর আগেও অনেকবার অভিযুক্ত ফারহান রনি হাঁস চুরি করে নিয়ে ওই নারীকে দিয়ে রান্না করেছে। আমাদের মায়ের এমন নৃশংস হত্যার বিচার চাই।
ছোট মেয়ের স্বামী কামাল কালবেলাকে বলেন, আমি পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকি। গতকাল মঙ্গলবার খবর পেয়ে এসেছি। আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছে। আমার শাশুড়ির মতো মানুষ হয় না। আমি এই হত্যার বিচার চাই।
নিহত শারমিন বেগমের স্বামী নুরুল ইসলাম বলেন, ভোরে কাজে বের হওয়ার সময় আমার স্ত্রী ঘরেই ছিলেন। বিকেলে ফিরে শুনি স্ত্রীকে হত্যা করেছে। এর পর রাত ৩টায় থানা থেকে বাড়ি এসেছি। আমি এ হত্যার বিচার চাই।
স্থানীয় জাহের মিয়াসহ দুজন নারী জানান, ফারহান মাদকাসক্ত। আগুনে পোড়ার গন্ধ পেয়ে মানুষ ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে যায়। হাঁসের মালিকও মনে করেছেন যে ফারহান হয়তো তাদের হাঁস পুড়িয়ে খেয়েছে। এ জন্যই তারা পরিত্যক্ত জায়গার ভেতরে গিয়ে লাশ পোড়ানো দেখতে পান। তবে এলাকায় বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী এই হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে আখাউড়া থানার ওসি মো. ছমিউদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় নিহত শারমিন বেগমের বড় মেয়ে রুমা বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এতে একমাত্র আসামি করা হয়েছে ফারহান রনিকে। আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি একেক সময় একেক কথা বলছে। আমরা আদালতের মাধ্যমে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করব। আমরা কয়েকটি বিষয় নিয়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য কাজ করছি। তবে আমাদের ধারণা তুচ্ছ কোনো বিষয় নিয়েই এ ঘটনা ঘটেছে।
মন্তব্য করুন