বগুড়ায় গণি চাচার নেহারি খাননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। শুধু বগুড়া নয়, তার নিহারি খেতে ছুটে আসেন সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, নওগাঁ, পাবনা, এমনকি দিনাজপুর জেলা থেকেও।
প্রতি সোম ও শুক্রবার বিক্রি হয় এই নেহারি। শত শত মানুষ আসে তার নেহারির স্বাদ নিতে। প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি বগুড়ার বনানীর সুলতানগঞ্জ হাটে নেহারি বিক্রি করে আসছেন। প্রতি হাটবার তিনি ১ লাখ টাকার নেহারি বিক্রি করেন।
আব্দুল গণির বাপ-চাচারা এ হাটেই ভাতের ব্যবসা করেছেন। বাবা একদিন তাকে বলেন, তুমি আমার পাশেই রুটি ও আলু ঘাটির ব্যবসা করতে পার। বাবার পরামর্শে কিশোর বয়সেই রুটি ও আলু ঘাটির ব্যবসা করেন তিনি। সে সময় ৫০ পয়সায় রুটি ও আলুর ঘাটি বিক্রি করেছেন। পরে আলু ঘাটির সঙ্গে যোগ হয় নেহারি। সে সময় তিনি এক পিস নেহারি বিক্রি করেছেন ২ টাকায়। এখন এক পিস বিক্রি হয় ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।
বর্তমানে আব্দুল গণির দোকানে দিনে ১৬০ কেজি নেহারি, ৫০ থেকে ৬০ কেজি বট ভাজি, ২৫ কেজি চাল ও ১৮ কেজি আটার রুটি বিক্রি হয়। টাকার অঙ্কে তার দিনে বিক্রি দাঁড়ায় ৮০-৯০ হাজার টাকা। মাঝে মাঝে বিক্রি লাখও পার হয়ে যায়। তার এ নেহারি পাওয়া যায় বনানীর হাটের দিন শুক্র ও সোমবার।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মালিপাড়া বাসস্ট্যান্ডে তার বাড়ি। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক আব্দুল গণি (৬০)।
তিনি জানান, আগে একসঙ্গে এত গরুর পা জোগাড় করতে বেশ বেগ পেতে হতো। তবে এখন মাঝিড়া ক্যান্টনমেন্ট, পাবনার নর্দান হ্যাচারিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়মিত তার কাছে গরুর পা আসে। প্রতি হাটবার ২০০ কেজি পর্যন্ত নেহারি বিক্রি করতে পারবেন, কিন্তু তা করেন না তিনি। ১৬০ কেজি করে বিক্রি করেন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল হতে না হতেই শেষ হয়ে যায় তার নেহারি। গরুর নেহারি ১৮০ টাকা, মহিষের নেহারি ২০০ টাকা, প্রতি পিস রুচি ১০ টাকা এবং প্রতি প্লেট ভাত ২০ টাকায় বিক্রি করেন। অনেকেই পরিবারসহ আসেন তার নেহারি খেতে।
আব্দুল গণি জানান, বিভিন্ন স্থানের মানুষ এসে খায় বলেই আমি এত নিয়ে আসি। সীমিত লাভে ব্যবসা করি। কোনো কায়দা করি না। নতুন কোনো স্বপ্ন নেই। তবে তার আশা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি যেন এই ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন।
বগুড়ায় প্রাণ কোম্পানির কর্মচারী আবু জাফর (৩৫) বলেন, গণি মিয়ার নেহারি আমি শুরুতেও খেয়েছিলাম, এখনো খাই। আমার কাছে স্বাদের কোনো পরিবর্তন লাগে না। মনে হয় তার রান্নার স্বাদ একই আছে। আগে যেমন সুস্বাদু ছিল, এখনো তাই আছে।
৪০ বছর ধরে রান্নার স্বাদ অপরিবর্তিত, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার ছেলে জিয়াউল ইসলাম বলেন, আব্বার রান্নার খ্যাতি আছে। তিনি সপ্তাহে দুদিন হাট করেন। গাইবান্ধার সাঘাটা থেকে নেহারি খেতে এসেছেন আমজাদ হোসেন। স্ত্রী, শ্যালিকা ও শিশু সন্তানকে সঙ্গে এনেছেন।
তিনি জানান, আমি ইউটিউবে চাচার এ নেহারির ভিডিও দেখে খেতে এসেছি। আমি অনেক জায়গায় নেহারি খেয়েছি। তবে এ জায়গার নেহারি আমার কাছে বেস্ট। আর এত বড় সাইজের নেহারি সচরাচর পাওয়া যায় না।
বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মোমেনা জানান, অনেক দিন ধরেই ইউটিউবে দেখছিলাম গণি চাচার নেহারি বিক্রির দোকান। কিন্তু সময় হচ্ছিল না। গত শুক্রবার এসে শেষ হয়ে গেছে দেখে ফিরে গেছি। তাই আজ আবার এসেছি। হাটের ভেতরের রান্না। তারপরও এত ভালো। খুব ভালো লেগেছে।
গণি চাচার এ নেহারি খেতে চাইলে প্রথমেই আসতে হবে বগুড়ায়। এরপর বগুড়া শহরের সাতমাথা থেকে অটোরিকশা নিয়ে আসতে হবে বনানীর সুলতানগঞ্জ হাটে।
মন্তব্য করুন