কদিন আগেই যমুনা নদীতে ফুলেফেঁপে ওঠা ঢেউ আর প্রবল স্রোতে আতঙ্কিত ছিল সিরাজগঞ্জবাসী। এখন সেই যমুনার বুকে চলছে ক্রিকেট খেলা। শুধু তাই নয়, শুকিয়ে যাওয়া নদীর বুকে চলে ধান, সরিষা ও বাদামের চাষও। নাব্য সংকটে নৌযান চলাচলেও সৃষ্টি হচ্ছে বিড়ম্বনা।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ হার্ডপয়েন্ট এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়। দুই মাস আগের ভয়ংকররূপী যমুনা এখন বিশাল খণ্ড খণ্ড অসংখ্য মাঠে পরিণত হয়েছে। তীররক্ষা বাঁধের পূর্বে খালের মতো একটি ক্যানেল রয়েছে। ক্যানেলটির পরেই জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল নতুন চর। জেগে ওঠা এসব নতুন চরে ধান, সরিষা ও বাদামের চাষ করছেন স্থানীয় কৃষক। এর পাশেই বড় একটি চরে ক্রিকেট খেলায় মত্ত রয়েছে যমুনাপাড়ের শিশু-কিশোররা।
নদীর মাঝে মাঝে বয়ে চলা খালের মতো ছোট ছোট জলাধারের কিনারে বাঁধা রয়েছে পারাপারের নৌকাগুলো। যমুনায় চরম নাব্য সংকটের কারণে যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌকাগুলোকে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে। এতে সময় অপচয়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে।
নদীপাড়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাস যমুনা উগ্ররূপ ধারণ করে থাকে। এর পরই দ্রুত শুকিয়ে যেতে থাকে নদী। ধীরে ধীরে নদীর বিভিন্ন অংশে বড় বড় চর জেগে ওঠে। প্রায় ১২ কিলোমিটার প্রশস্ত নদীর ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার অংশেই থাকে নতুন-পুরোনো চর। এসব চরে স্থানীয় কৃষকরা আবাদ করে থাকেন।
নৌকার মাঝিরা বলেন, নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন নৌপথ দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। মাইলের পর মাইল ঘুরে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ভূঁইয়া বলেন, যমুনা নদীতে প্রতি বছরই চর জেগে ওঠে। সেইসঙ্গে কিছু কিছু পুরোনো চর ভেঙে নদীতে চলে যায়। ১২ কিলোমিটার প্রশস্ত এ নদীর প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় পানি রয়েছে। বাকি ৯ কিলোমিটারজুড়েই শুধু চর। এর মধ্যে পুরোনো চর রয়েছে। প্রতি মৌসুমেই একাধিক নতুন চরও জেগে উঠেছে। এসব চরের বিভিন্ন স্থানে ছেলেরা খেলাধুলা করে।
আর জেগে ওঠা চরগুলোতে বোরো, সরিষা, বাদাম, কালাই চাষাবাদ করেন কৃষকরা। চরের জমি আগে যার ছিল পরবর্তী সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড অধিগ্রহণ করে নিয়েছে; সেসব কৃষকই চাষাবাদ করে থাকেন।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুখলেসুর রহমান বলেন, যমুনা নদী একেক স্থানে একেক রকম প্রশস্ত। গাইবান্ধা-কুড়িগ্রাম যেমন ১৬ থেকে ১৮ কিলোমিটার, বগুড়া, কাজীপুর এসে ১২ কিলোমিটার। যমুনা সেতুর উজান দিকে প্রশস্তটা ৮ কিলোমিটার আবার ভাটিতে ১২ কিলোমিটার।
তিনি বলেন, যমুনার ৯৩ শতাংশ পানি ভারত, চীন ও নেপাল থেকে আসে। বাকি ৭ শতাংশ বাংলাদেশের। ওইসব দেশ থেকে পানির সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ বালু ও পলি আসে। ভারত ও চীনের সেসব অঞ্চল ঢালু হওয়ার কারণে বালু ও পলিগুলো সেখানে স্থিত হতে পারে না। আমাদের এ এলাকার সমতল মাটিতে এসে পলিগুলো স্থিত হয়। যে কারণে যমুনায় প্রতি বছরই নতুন নতুন চর জেগে ওঠে। এভাবে চর জেগে উঠলে বন্যা ও নদীভাঙন আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে।
মন্তব্য করুন