জীবিকার তাগিদে নয়, অনেকটা শখের বসে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আমজাদ হোসেন (২৫) নামে মিরসরাইয়ের এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার (২২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টায় আফ্রিকার স্থানীয় সময় শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাত ২টায় পুমালাঙ্গা প্রদেশের মাইফ্লাইওয়ার এলাকার গুবা সুপার মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে। তিনি ওই মার্কেটের একই এলাকার বাসিন্দা শহীদুল ইসলামের দোকানে কর্মরত ছিলেন।
নিহত আমজাদ মিরসরাই উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের হরিহরপুর গ্রামের ৫ নাম্বার ওয়ার্ডের মনির আহমদ সওদাগর বাড়ির মো. রবিউল হোসেন প্রকাশ হোরা মিয়া সওদাগর ও বিবি মরিয়ম দম্পতির একমাত্র ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেড় বছর আগে ফেনী সরকারী কলেজ থেকে বিবিএ শেষ করে শখের বসে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান আমজাদ। সেখানে একই এলাকার শহীদুল ইসলামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তিনি। কিছুদিন আগে শহীদ ছুটিতে দেশে আসে। স্থানীয় সময় শনিবার রাতে দোকানে একা পেয়ে সন্ত্রাসীরা গুলি করলে ঘটনাস্থলে নিহত হন আমজাদ। খবর পেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি ছুটিতে দেশে আসি। দেড় বছর আগে আমজাদ আফ্রিকায় গিয়ে আমার দোকানে ছিল। আফ্রিকার স্থানীয় সময় শনিবার রাত ২টায় আমজাদ দোকান বন্ধ করে দোকানের পিছনে ঘর ছিল সেখানে ঘুমিয়ে যায়। হঠাৎ দরজায় ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজ শুনে আমজাদ উঠে দোকানের মূল ফটক খুলে দিলে সঙ্গে সঙ্গে তারা ভেতরে ঢুকে গুলি করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে বাংলাদেশ সময় রোববার ভোরে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।’
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা দোকান থেকে কোনো টাকা পয়সা নিয়ে যায়নি। ডাকাতির উদ্দেশ্যে নাকি শত্রুতার জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে কিছুই বুঝতেছি না। আজকে আফ্রিকায় সরকারি ছুটি হওয়া কোনো যোগাযোগ করা সম্ভভ হচ্ছে না। সোমবার সকালে যোগাযোগ করে আমি আমজাদের মরদেহ দেশে নিয়ে আসার দক্ষিণ আফ্রিকায় যাব। বর্তমানে তার মরদেহ আফ্রিকার স্থানীয় একটি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।’
নিহত আমজাদের মা বিবি মরিয়ম বলেন, ‘শনিবার রাতে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় আমার সাথে শেষ কথা হয়েছিল। এটা যে শেষ কথা হবে কে জানতো? দোকানে কাজ থাকায় বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেনি। আমার মনাকে যারা এইভাবে গুলি করে হত্যা করেছে তাদের যেন বিচার করা হয়।’
বাবা রবিউল হোসেন প্রকাশ হোরা মিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে, টাকা পয়সার অভাব ছিল না আমার। সফলতার সঙ্গে পড়ালেখা শেষ করেছে। বারবার নিষেধ করেছিলাম। এলাকার অনেকেই এবং তার অনেক বন্ধু আফ্রিকা প্রবাসী হওয়ায় শখের বসে সেও দেড় বছর আগে যায়। সেখানে সন্ত্রাসীদের নির্মম গুলিতে আমার একমাত্র ছেলে প্রাণ হারিয়েছে। ছেলেকে ছাড়া আমি পাগল হয়ে যাব।’
নিহত আমজাদের মামাতো ভাই খুরশিদ আলম বলেন, ‘আমার মামার একমাত্র ছেলে আমজাদ হোসেন। সে পড়ালেখা শেষ করে অনেকটা শখের বসে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান। আমরা অনেক নিষেধ করেছি, তবুও কারও কথা শুনেনি। রোববার বাংলাদেশ সময় ভোরে দক্ষিণ আফ্রিকার সন্ত্রাসীদের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। লাশ দেশে নিয়ে আসার পক্রিয়া চলছে। যত দ্রুত সম্ভব লাশ দেশে নিয়ে আসা হবে। সরকারের কাছে একটি আবেদন এ হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের যেন দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।’
দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বিপ্লব বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রবাসী আমজাদ হোসেন দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ার খবর শুনেছি। খুবই মমান্তিক ঘটনা।’
মন্তব্য করুন