স্থানীয় মঞ্চে গান গেয়ে মন জয় করেছিলেন শ্রোতাদের। গাইতেন সিলেট বেতারেও। কিন্তু মনে কষ্ট পেয়ে ছেড়ে ছিলেন গান। সেই বাউল শিল্পী সেন দেবনাথ এখন অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তিনি সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভার শুকরনগর গ্রামের দিনবন্ধু দেবনাথের ছেলে।
জানা যায়, পিতা দিনবন্ধু দেবনাথের কাছে ছোট থেকে গান শিখতেন সেন দেবনাথ। পরে গানের শিক্ষক প্রমথ বৈষ্ণবের কাছে দুই বছর গান শেখেন তিনি। স্থানীয় মঞ্চে পল্লীগীতি গেয়ে মনজয় করেছিলেন শ্রোতাদের। নব্বই দশকের দিকে বাংলাদেশ বেতার সিলেটে তিনি দলীয় গান গাইতেন। গেয়েছিলেন একাধিক গান। গান গেয়ে পেয়েছিলেন অনেক পুরস্কার।
সেন এখন দিরাই পৌরসভার বিভিন্ন রাস্তায় ভাড়াটিয়া অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সম্পদ বলতে আছে শুধু তার বাড়িটা। অটোরিকশা চালিয়ে তিনি তার দুই সন্তানকে পড়াচ্ছেন। বড় ছেলে প্রান্ত দেবনাথ অনার্স পড়ছে আর ছোট ছেলে অসীত দেবনাথ এইচএসসি পাস করেছে।
সেন দেবনাথ কালবেলাকে বলেন, একসময় আমি খুব ভালো গান গাইতাম। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্থানীয় মঞ্চে গান গেয়ে দর্শকদের মন জয় করতাম। তারা অনেক সময় খুশি হয়ে আমাকে টাকা পয়সা দিতেন। আমি সিলেট বেতারেও অনেক গান গেয়েছি। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গানেও সুর দিয়েছি।
তিনি বলেন, চারদিকে যখন আমার খ্যাতি ও গুণ প্রকাশ করতে শুরু হয় তখন স্থানীয় কিছু শিল্পী ও প্রভাবশালীরা আমাকে অনুষ্ঠানে ডেকেও গান গাওয়ার সুযোগ দিতেন না। তখন আমাদের আর্থিক অবস্থাও খারাপ যাচ্ছিল। এর আগে আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব ভালো ছিল। আমার বাবাকে ধোঁকা দিয়ে জমিজমা একজন নিয়ে যায়। এসব কষ্টে আমি গান ছেড়েছি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. কেনু মিয়া কালবেলাকে বলেন, সেন খুব ভালো গান করে। সে এই বয়সেও অসাধারণ গায়। শুনেছি সে বেতারে গান গাইত, তবে এ সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না।
সিলেট বেতারের সাবেক চাকরিজীবী আউট ব্রট ক্লাস্টার আশুতুষ বৈষ্ণব কালবেলাকে বলেন, ২০১০ সালেরও আগে সেন দেবনাথ বেতারে দলীয় সংগীত গাইত। সে বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিল না। তবে সে অনেক সুন্দর করে বেহালা বাজিয়ে গান গাইত। তার কণ্ঠসুরও ছিল চমৎকার।
সেনের চেয়ে নিম্নমানের শিল্পীরা বেতারে তালিকাভুক্ত হয় কিন্তু তিনি কেন হতে পারেননি এমন প্রশ্নের উত্তরে আশুতুষ বৈষ্ণব বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আসলে সেন যখন বেতারে দলীয় সংগীতে কণ্ঠ দিত সে সময়ে আমি বেতারের চাকরি ছেড়ে চলে আসি। থাকলে হয়তো এতদিনে তাকে সহযোগিতার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করিয়ে দিতাম।
মন্তব্য করুন