খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৪ পিএম
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জীবনের বিনিময়ে অভ্যুত্থানের স্পিরিট রক্ষা করব : সারজিস

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সারজিস আলম। ছবি : কালবেলা
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সারজিস আলম। ছবি : কালবেলা

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সারজিস আলম বলেছেন, জীবনের বিনিময়ে হলেও এই অভ্যুত্থানের স্পিরিট রক্ষা করার জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫৮ শহীদ পরিবারের প্রতিটিকে ৫ লাখ টাকা করে মোট দুই কোটি ৯০ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়।

এ সময় সারজিস বলেন, জেলা পর্যায়ে যে সব শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধারা রয়েছেন জেলা প্রশাসন এবং পুলিশসহ অন্যান্য স্টেক হোল্ডাররা মিলে তাদের দায়িত্ব ভাগ করে নিলে আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। যোগ্যতা অনুযায়ী শহীদ পরিবার থেকে একজন করে হলেও চাকরির ব্যবস্থা করি, তাহলে আমাদের দায়িত্বগুলো সহজ হয়ে যায়।

পুলিশের উদ্দেশ্যে সারজিস বলেন, পুলিশ চাইলে অনেক কিছু ঠিক হয়ে যাওয়া সম্ভব। তাদের প্রভাবটা মাঠ পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অল্প কিছুদিন সহযোগিতার জন্য এসেছে, আবার চলে যাবে। পুরো বাংলাদেশের মাঠ পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য পুলিশ যে ভূমিকা পালন করতে পারে আর কেউ সেটা পারে না। যাদের কাছে প্রত্যাশা সবচেয়ে বেশি, তাদের কাছে চাওয়াটাও বেশি হয়। আমরা এখনো আপনাদের প্রতি আস্থা হারাইনি, আমরা আস্থাটা রাখতে চাই। কিন্তু আস্থাটা রাখতে পারব কিনা সেটা আপনাদের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে সারজিস আলম বলেন, যদি আপনাদের জায়গা থেকে এই দায়িত্বটুকুর ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র গড়িমসি করেন- এই বাংলাদেশে আপনাদের মুখ দেখানোর আর কোনো পথ থাকবে না।

তিনি বলেন, এই রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাঠামোর যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে যতটুকু দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল ততটুকু করেননি। একটা ফ্যাসিস্ট দল একটা ফ্যাসিস্ট রেজিম আওয়ামী লীগের হুকুম মতো দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দায় যে, বিগত ১৬ বছরে আমরা এরকম একটা স্বৈরাচার সিস্টেমকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হতে দিয়েছি। রাষ্ট্র কাঠামোর বিভিন্ন ক্ষেত্রে যার যতটুকু পাওয়ার ছিল তার দায়িত্ব তত বেশি। আমাদের এই অভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নৃশংস একটি হামলা চালায় এবং রংপুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় হত্যাযজ্ঞটি শুরু হয়, তখন এই খুনি শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পুলিশকে ব্যবহার করেছে। বিগত ১৬ বছরেও বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছে।

তিনি বলেন, যারা শেখ হাসিনার দালাল ছিল, তোষামোদকারী ছিল, তারা বেঁচে গিয়েছে। আরেকটা বেঁচে যাওয়ার পদ্ধতি ছিল, হয় আপনাকে নিষ্ক্রিয় দর্শক হতে হবে অথবা দাস হতে হবে। এর বাইরে যদি আপনি কিছু হওয়ার চিন্তা করেন তাহলে আপনাকে হয়রানি করার জন্য মামলা, জেল, জুলুম, গুম, খুন, হত্যা যেভাবে যা কিছু করা যায় সবকিছু করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে অপব্যবহার করা হয়েছে। এই ক্ষতিটা যতটা না বাংলাদেশ পুলিশের হয়েছে, তার চেয়ে বেশি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির হয়েছে। প্রায় আড়াই লাখ সদস্যের একটি পরিবার, এই একটি পরিবার যদি চায় এবং পদ অনুযায়ী, শপথ অনুযায়ী তাদের দায়িত্বটুকু রাষ্ট্রের জন্য সঠিকভাবে পালন করে তাহলে এই বাংলাদেশের আমরা যে স্বপ্ন দেখি, প্রত্যাশা করি, সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অর্ধেকের বেশি রাস্তা অটোমেটিক প্রশস্ত হয়ে যায়। কিন্তু বিগত ১৬ বছরে এবং এই অভ্যুত্থানের সময় এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে অপব্যবহার করা হয়েছে।

সারজিস আলম আরও বলেন, আমরা এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে কোনো দিনও, জীবন চলে গেলেও বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না। এটা কোনো দিনও সম্ভব না।

তিনি বলেন, এখন অনেকেই রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত উদ্দেশ্যে এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেককেই প্রশ্নবিদ্ধ করার নোংরা চেষ্টা চালাচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক দল জুলাইয়ের ৩০ তারিখ পর্যন্ত বলেছিল আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি, আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের সঙ্গে একমত হবো কিনা। এই সংগ্রামে যুক্ত হব কিনা। তারা যদি বড় বড় গলায় আমাদের সামনে বলে এই গণঅভ্যুত্থানে তারাই সামনের সারিতে ছিল, আমরা শুধু অংশগ্রহণ করেছি। তাদের শুধু আমরা বলতে চাই, বড় গলায় কথা বলার আগে নিজেরা বিবেকবোধের জায়গা থেকে একটি জিনিস শুধু চিন্তা করুন জুলাইয়ের পুরো মাসে আপনাদের অবস্থানটা কী ছিল। জুলাইয়ের পুরো মাসে আপনাদের কথা বলার জায়গাগুলো কেমন ছিল। কথা বলার জায়গাগুলো কেমন ছিল। ব্লেইম গেম দিয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাসকে নষ্ট করতে পারবেন না।

অনুষ্ঠানে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার, অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি মো. হাসানুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মো. তারিকুল ইসলাম, আশরফা খাতুন ও মো. ওয়াহিদুজ্জামান বক্তৃতা করেন।

এতে স্বাগত বক্তৃতা দেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। তারা জীবন দিয়ে নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়ে গেছেন। এ বাংলাদেশ আত্মপ্রত্যয়, দুর্বার ও সাহসের বাংলাদেশ। নতুন বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। এই অভ্যুত্থানের ইতিহাস নতুন বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার সংগ্রামের ফসল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে একটি মহল অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার চেষ্টা এখনো চলছে। ছাত্রদের স্পৃহা, মনের আকাঙ্ক্ষা আমাদের বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। গত ১৫ বছর সব ক্ষেত্রে বৈষম্য ছিল। আমাদের সমাজ ও বাংলাদেশকে বৈষম্যহীনভাবে গড়ে তুলতে হলে সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও খুলনা জেলার সমন্বয়ক ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর নাম বাতিল করে গেজেট প্রকাশ

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ভাষানটেক থানা শাখার কমিটি গঠন

কামরুন্নাহার পপির স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত

সোয়া নয় কোটি টাকা মূল্যের মাদকসহ কারবারি গ্রেপ্তার 

বনশ্রীতে ভবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা মাহফুজের পোস্ট ইস্যু

‘দায়িত্ব পেলে মালিক নয়, সেবক হিসেবে কাজ করবে জামায়াত’

জবির গাজীপুর জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের দায়িত্বে দুর্জয় এবং ফয়সাল

দৌলতদিয়ায় ৫ কিমিজুড়ে যানজট

মা তার ১০ মাসের সন্তানকে নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিল : জামায়াত আমির

১০

হাসান আরিফ ছিলেন সর্বমহলে পরিচিত মুখ : ড. ফরহাদ

১১

উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে কর্নেল অলির শোক

১২

এক সন্তানের জননীর অনশন, পরিবার নিয়ে পালালেন রাসেল

১৩

পাকাপাকি ভাবে ভারত ছাড়ছেন কোহলি!

১৪

ভারত মহাসাগর থেকে শতাধিক রোহিঙ্গা উদ্ধার

১৫

হাসপাতালে স্ত্রীর মরদেহ রেখে পালালেন ইমন 

১৬

নব্য দখলদারিদের পরিণতিও হাসিনার মতো হবে : আবু হানিফ

১৭

জাতির প্রতিটি অর্জনে গর্ব করার দল বিএনপি : রিজভী

১৮

প্রধান উপদেষ্টাকে গণঅধিকার পরিষদের আলটিমেটাম

১৯

শনিবার বসছে বিসিবির বোর্ড মিটিং

২০
X