‘ডিসি মোস্তাক আহমেদকে চেনেন? হু আর ইউ, ইবলিস কোথাকার’ নিজ অফিসে ডেকে নিয়ে এমন অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ।
এতেও ক্ষ্যান্ত হননি, তুই-তোকারি করে সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জলকে প্রায় মারতে উদ্যত হন তিনি।
বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল এলাকায় সৎ ও খ্যাতিমান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।
এঘটনার বিচার দাবি করে বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের আব্দুল মোতালেব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল জানান, জেলা প্রশাসকের আচমকা এ ধরনের আচরণে তিনি হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে একপর্যায়ে আমাকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল ডিসির রুম থেকে বাইরে নিয়ে যান।
তিনি জানান, ঘটনার পরপরই তিনি বিষয়টি সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের জানালে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। একইসঙ্গে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সব সদস্য। তারা এঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রতিকার দাবি করেন।
ঘটনা প্রসঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল আরও জানান, তিনি সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মিশনের ২৫ সদস্যের কার্যনির্বাহী এই কমিটির জেলা প্রশাসক ১৯৪৮ সাল থেকে পদাধিকার বলে সভাপতি। বর্তমান কমিটি চলতি বছরের ২২ মে এক সভার মাধ্যমে সাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির অত্র কমিটির অনুমোদন করেন।
তিনি জানান, এই কমিটির ঘাড়ে মহামান্য হাইকোর্টসহ সাতক্ষীরার আদালতে ৬টি মামলা চলমান রয়েছে। যারা এসব মামলা করেছেন তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বর্তমান জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ কমিটির সঙ্গে কোনো ধরনের সভা না করে, নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সঙ্গেও কোনো পরামর্শ না করে গোপনে গত ৬ নভেম্বর চলমান কমিটি ভেঙে দিয়ে একটি এডহক কমিটি গঠন করেন।
তিনি আরও জানান, বিষয়টি জানার পর মিশনের কার্যনির্বাহী কমিটির ২১ জন সদস্য বিষয়টি পূর্ণবিবেচনার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে একটি আবেদন করেন। এমতাবস্থায় বাধ্য হয়ে মিশনকে রক্ষার স্বার্থে তিনি (মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল) মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। মহামান্য হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ শুনানি শেষে গত ১৫ ডিসেম্বর উক্ত এডহক কমিটি স্টে করে রুল জারি করেন।
এমন প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল বুধবার ১০টা ৩৯ মিনিটে ফোন দিয়ে আমাকে বলেন, সেকেন্ড হাফে জেলা প্রশাসক আপনাকে দেখা করতে বলেছেন। সেই মোতাবেক বিকেল ৪টার পরপরই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান তিনি। সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল জেলা প্রশাসকের রুমে বসতে বলেন।
এর কিছুক্ষণের মধ্যে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ রুমে প্রবেশ করতেই অকথ্য ভাষায় উচ্চস্বরে গালমন্দ শুরু করেন এবং বলেন, মিশনের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে কাগজপত্র বুঝিয়ে দেননি কেন? এসব বলতে বলতে বলেন- ‘ডিসি মোস্তাক আহমেদকে চেনেন? ‘হু আর ইউ’ ইবলিস কোথাকার’- তিনি রুমে অবস্থানরত অন্যদের দেখিয়ে বলেন, সাতক্ষীরায় কিছু ইবলিস আছে এ একটা ইবলিস।
মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল তখন তাকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন এবং বলেন বিষয়টি আপনি ব্যক্তিগতভাবে নিচ্ছেন কেন? তাছাড়া এডহক কমিটি মহামান্য হাইকোর্ট স্টে করে দিয়েছেন। তখন তিনি আরও ক্ষিপ্র হয়ে ওঠেন এবং অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এমন অবস্থায় সেখানে অবস্থানরত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল আমাকে বাইরে নিয়ে যান এবং চলে যেতে বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মিশনের জিএম আব্দুল হামিদ, জিএম মাহবুবর রহমান, আব্দুল খলেক প্রমুখ।
এবিষয়ে জানতে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও কল রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন