রাজশাহীর একটি আবাসিক হোটেলে চাঁদা না পেয়ে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। হোটেলটিতে টাকা-পয়সা না পেয়ে এমন লুটপাট করা হয়েছে বলে হোটেলটির মালিকপক্ষ অভিযোগ করেছে।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার গণকপাড়া এলাকার হোটেল গ্র্যান্ড আবাসিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মুখোশ পরা ৮ থেকে ১০ সশস্ত্র যুবক হোটেলটিতে হানা দেয়। তারা হোটেলের দোতলায় একটি রেস্তোরাঁয় চারজন কর্মচারীকে জিম্মি করে রেখে নিচতলায় লুটপাট চালায়।
হোটেলটির মালিকের নাম আবুল বাসার সুজন। তিনি নগরের বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা। এ ছাড়া তিনি রাজশাহীর তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে আছেন। রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ অনুসারী তিনি। গত ৫ আগস্টের পর মামলার আসামি হয়ে সুজন আত্মগোপনে রয়েছেন। বর্তমানে হোটেলটি দেখাশোনা করেন তার ভাতিজা রোকন সরকার।
রোকন দাবি করেছেন, রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের দুই নেতার নেতৃত্বে ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠনের নামে তারা হোটেলে এসে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে কয়েকবার চাঁদা নিয়ে গেছে। কয়দিন আগে জুয়েল নামে একজন ফোন দিয়ে চাঁদা দাবি করেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে এসে প্রথমে তারা ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এত টাকা দিতে পারব না বললে তারা দোতলায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিম্মি করে নিচতলার হোটেলে ডাকাতি শুরু করে।
হোটেলের ব্যবস্থাপক তৌকির আহমেদ রনি জানান, ঘটনার সময় তারা হোটেলে চারজন ছিলেন। ছাত্রদলের ওই নেতাকর্মীরা এসে বলেন, তাদের সঙ্গে হোটেলের মালিকপক্ষের বসার কথা ছিল। কিন্তু বসেনি। তাদের এখন দুই লাখ টাকা দিতে হবে। হোটেলে টাকা নেই জানালে তারা সিসিটিভি ক্যামেরা ও ইন্টারনেটের ক্যাবল ছিঁড়ে ফেলে তাদের চারজনকে দোতলায় নিয়ে আটকে রাখে। এরপর নিচতলায় হোটেলের জিনিসপত্র তছনছ করে।
তিনি জানান, হোটেলে নগদ টাকা ছিল না। তাই তারা ছোট ছোট কিছু জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। ওই সময় একজনের কাছে থাকা ফোন থেকে কৌশলে পুলিশকে জানানো হয়েছিল। দ্রুত ঘটনাস্থলে আসার জন্য অনুরোধ করেন তারা। এর এক ঘণ্টা পর বোয়ালিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। অথচ বোয়ালিয়া থানা থেকে হোটেলে আসতে পাঁচ মিনিটও লাগার কথা নয়। পুলিশ আসতে দেরি করার কারণে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা নির্বিঘ্নেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
হোটেল মালিকের ভাতিজা রোকন সরকার বলেন, পাঁচ-ছয়জন হোটেলে এসেছিল। তার মধ্যে দুজনকে তিনি চিনেছেন বলে জানান। তাদের মধ্যে একজন রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং আরেকজন সিটি কলেজ শাখা ছাত্রদলের নেতা বলে তার দাবি।
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি আকবর আলী জ্যাকি বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত যে দুজনের নাম বলা হচ্ছে তার একজন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক নেতা। সে বর্তমানে মহানগর ছাত্রদলের কেউ না। তার দায়ভারও ছাত্রদল নেবে না। আরেকজন ঘটনার সময় জিমে ছিলেন। তার নামটি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বলা হচ্ছে। তার জড়িত থাকার বিষয়টি কেউ প্রমাণ করতে পারলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুন-অর রশিদ মামুন বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে যদি কেউ এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নগরীর বোয়ালিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তাজেমুল ইসলাম জানান, ‘অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। তবে বুধবার বিকেল পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেননি। টাকা পয়সা কিছু খোয়া গেছে কি না এখনো জানি না। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন