কিশোরগঞ্জে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে কটূক্তি করে বক্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
মানববন্ধনে কটূক্তিকারী বক্তা মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়াকে ২৪ ঘণ্টার ভেতরে গ্রেপ্তার ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মানববন্ধন থেকে ‘কানে শোনে না ডিসি, স্বৈরাচারের পিসি’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’সহ নানা স্লোগান দেওয়া হয়। অন্যথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
জানা গেছে, গত ১৬ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কটূক্তি করে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া বলেন, আবু সাঈদের ছবি না দিয়ে যদি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি দিতো তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। আবু সাঈদ শহীদ হয়েছে, কার সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছে? কোন দেশের সঙ্গে তারা যুদ্ধ করছে? যারা ২৪-এর আন্দোলন করছে, সংগ্রাম করছে, দেশটাকে এক হাত থেকে আরেক হাতে পরিবর্তন করছে- তারা এখন আমাদের শাসন করবে, আমরা তাদের শাসন মেনে নেব, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এই জিনিসটা ক্লিয়ারিফিকেশনের জন্য মান্যবর জেলা প্রশাসকের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, আবু সাঈদের ছবি কীভাবে আসছে। বিজয় দিবসের দিনে রাস্তা-ঘাটে সব জায়গাতে প্রদর্শিত হচ্ছে।
ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া তার বক্তব্য শেষ করার সময় ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন। এসময় মঞ্চে থাকা জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানসহ কেউ কোনো প্রতিবাদ বা আপত্তি করেননি।
মানববন্ধনে ছাত্র নেতারা বলেন, যারা ১৮ জুলাই জেলা শহরের কালীবাড়ি মোড়ের বিজয় চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছিলেন তাদেরও বিজয় দিবসের মঞ্চে দেখা গেছে।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী ঘরানার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক দুই কমান্ডার এবি ছিদ্দিক ও ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া ছাড়াও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার মাহবুব আলম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মিজানুর রহমান খান, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভূঞা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ শাখার অন্যতম সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন, অভি চৌধুরী, শেখ মুদ্দাসসির তুশি, শহীদ তরিকুল ইসলাম রুবেলের বড় ভাই জুয়েল আহমেদ, আফসানা আক্তার মীম।
মানববন্ধন থেকে সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে যেভাবে কটূক্তি করেছে, বক্তব্য দিয়েছে, তাকে ২৪ ঘণ্টার ভেতরে গ্রেপ্তার করতে হবে। এ ছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত থেকে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান কোনো প্রতিবাদ না করায় তাকে অবিলম্বে কিশোরগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় কিশোরগঞ্জের ছাত্রসমাজকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
মানববন্ধনে অভি চৌধুরী বলেন, এখনো প্রশাসনে আওয়ামী ফ্যাসিস্টের প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে। অবিলম্বে তাদের বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যে শহীদ আবু সাঈদ আমাদের চব্বিশের আন্দোলনের প্রেরণা, তাকে কটূক্তি করে এখনও বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। গত ১৮ জুলাই জেলা শহরের কালীবাড়ি মোড়ের বিজয় চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে যারা মানববন্ধন করেছিলেন তাদের ডিসি দাওয়াত দিয়ে মঞ্চে বসিয়েছেন। আবু সাঈদকে নিয়ে কটূক্তি করে বক্তব্য দেওয়ার পরেও ডিসি কোনো প্রতিবাদ করেনি। এমনকি তিনি মঞ্চে থেকেও তিনি নাকি শুনেননি।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানের বক্তব্য জানার জন্য তার কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার সরকারি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও ফোন রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন