হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের জলসুখা ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষক দ্বীন ইসলাম মিয়া (৫৩) চলতি বছরে রোপা আমন মৌসুমে ১০ একর জমিতে আবাদ করেছিলেন রোপা আমন ধান। প্রতি একরে ধানের চারা, রোপণ, হালচাষ, সার, কীটনাশক ও কর্তনে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
দিন তিনেক আগে আট বিঘা জমির ধান কেটেছেন তিনি। প্রতি একরে ধানের ফলন হয়েছে প্রায় ৬৩ মণ। ধান কাটার পরদিন প্রতি মণ ধান বিক্রি করেছেন ১ হাজার ২৪০ টাকা দরে। ধানের ভালো ফলন আর দামে খুশির জোয়ার দ্বীন ইসলাম মিয়ার চোখেমুখে।
দ্বীন ইসলাম মিয়া বলেন, ১০ একর জমিতে ব্রি আর-৪৯ জাতের আমন চাষ করেছিলাম। তিন দিন আগে ৮ বিঘা জমির ধান কেটে বিক্রি করেছি। ফলন ও দাম দুটোই ভালো হওয়ায় লাভের মুখ দেখতে পারব আশা করছি। গত বোরো মৌসুমে ধানের দাম কম থাকায় অনেকটাই লোকসানে ছিলাম। আশা করছি এক সপ্তাহের ভেতরে সব জমির ধানই কাটতে পারব।
শুধু দ্বীন ইসলাম মিয়া নন, গত বোরো মৌসুমের ধানের কম দামের কারণে লোকসানের পর রোপা আমনের এমন বাম্পার ফলন। নিজেদের শ্রম আর ঘামে উৎপাদিত ফসলের ভালো দাম পাওয়ায় উপজেলার হাজারো কৃষকের মুখে এখন আনন্দের হাসি।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলায় ৭ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা, সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়া ও পোকার আক্রমণ কম থাকায় উপজেলার সবকটি হাওরেই আমনের ভালো ফলন হয়েছে এবার। কোথাও কোথাও বোরো ফসলের চেয়েও বেশি ফলন হয়েছে রোপা আমনের।
সরেজমিনে উপজেলার বেশকটি হাওর ঘুরে দেখা যায়, দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠে আমনের সোনালি আভায় আলোকিত হাওরের চারপাশ। সেই হাওরে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কেউ বা ধান কাটতে ব্যস্ত আবার কেউ বা সেই ধান বস্তাবন্দি করে জমির পাশেই ধান শুকানোর মাঠে নিয়ে যাচ্ছেন। বিশাল এই কর্মযজ্ঞে যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। কৃষকদের এই কর্মযজ্ঞে বসে নেই ঘরের কিষানিরাও। কিষানদের কেউ ধান সিদ্ধ করছেন আবার কেউ সেই ধান রোদে শুকিয়ে বস্তাবন্দি করে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সদর ইউনিয়নের কৃষক ইশা মিয়া জানান, তিন একর জমিতে রোপা আমন চাষ করেছি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। দিন তিনেক পরই কাটা শুরু করব। সবকিছু ঠিক থাকলে এই মৌসুমে লাভের মুখ দেখতে পারব আশা করছি।
বদলপুর ইউনিয়নের কৃষক গোলাম মাওলা বলেন, এবার আমনের ফলন আর দাম দুটোই ভালো। আমাদের শ্রম আর ঘামের ফসলের ফলন আর দামে এই মৌসুমে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. লুৎফে আল মুঈজ কালবেলাকে বলেন, চলতি বছর উপজেলায় সাত হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এবং অর্জিত হয়েছে। হাওরে নিম্নাঞ্চল থেকে পানি তাড়াতাড়ি নামলে উৎপাদন আরও বেশি হতো। তা ছাড়া ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। কোনো কোনো হাওরে বোরো ফসলের চেয়েও বেশি ফলন হয়েছে। কৃষকরা বাজারে ধানের ভালো দামও পাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলায় ৪ হাজার ১৭১ হেক্টর জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে, যা মোট আবাদের ৫২ শতাংশ। আশা করছি, দিন দশেকের মধ্যেই সব হাওরের ধান কাটা শেষ হবে।
মন্তব্য করুন