চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও সীতাকুণ্ড উপজেলায় বিএনপির দুগ্রুপের মধ্যে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পৃথক ঘটনায় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে হাটহাজারী পৌরসভার কনক কমিউনিটি সেন্টারে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাটহাজারী সদরের কনক কমিউনিটি সেন্টারে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানার অনুসারীদের আয়োজনে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা চলছিল। হঠাৎ কনক কমিউনিটি সেন্টার ভাঙচুর করে মীর হেলালের অনুসারীরা। এ সময় আহত হন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল উত্তর জেলার সাবেক সদস্য মু. আকরাম উদ্দীন পাভেল, পৌর যুবদল নেতা রাশেল,ওয়াসিম, ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. সাহাব উদ্দীন, ওয়ার্ড যুবদল বিজয় কুমার চৌধুরী, জসিম, বাবলু, শাকিল, মহরম আলী মানু, যুবদল নেতা দুলাল ও সাইফুল।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল উত্তর জেলার সাবেক সদস্য মু. আকরাম উদ্দীন পাভেল জানান, ‘হঠাৎ এসে কমিউনিটি সেন্টারে ভাঙচুর চালায় মীর হেলালের অনুসারীরা। সেন্টারের সব গ্লাস গুড়িয়ে দেয়। তারা হলের ভেতরে গিয়ে বেশ কয়েকজন বয়োবৃদ্ধ নেতাকর্মীকে লাঠিসোঁটা, লোহা দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছেন। ঘটনায় আমাদের ১০ জন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন।’
অভিযোগ করে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা বলেন, ‘মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় দিনে দুপুরে হামলার মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের আহত করা চরম ধৃষ্টতা। কমিউনিটি সেন্টারের মূল সড়কে পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও তাদের নিরবতা জনমনে ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নেতাকর্মীদের শান্ত করেছি, পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। দলের নীতিনির্ধারকদের জানিয়েছি, আশা করছি তারা জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া য়ায়নি।
জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ওসি আবু কাওসার বলেন, ‘পুলিশ তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে। হামলার বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।’
এদিকে একই দিন সোমবার দুপরে সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের ফৌজদারহাট এলাকার কে এম হাই স্কুল মাঠেও বিএনপির দুইগ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রথম পর্যায়ে এ ঘটনা স্কুল মাঠে ঘটলেও পরে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। সংঘর্ষের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। সৃষ্টি হয় রণক্ষেত্র। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
স্থানীয়রা বলছেন, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সেক্রেটারির অন্তকোন্দলের কারণে এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু এ বিষয়ে সলিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সেক্রেটারি একে অপরকে দোষারোপ করছেন। এ বিষয়ে জানার জন্য উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমল কদরের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জিয়া স্মৃতি সংসদের ব্যানারে সলিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সেক্রেটারি পৃথকভাবে বিজয় দিবস উদযাপন করার জন্য ফৌজদারহাট কে এম হাই স্কুলের ভেতরে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যায়। এর আগে সেখানে সলিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন ও তার কর্মী-সমর্থকরা জিয়া স্মৃতি সংসদের ব্যানারে ফুল দিতে যায়। এ সময় সলিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি জাহেদুল হাসানের নেতৃত্বে জিয়া স্মৃতি সংসদের ব্যানারে নেতাকর্মীরা ফুল দিতে গেলে স্লোগান নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে প্রায় উভয় পক্ষের ৪০ থেকে ৫০ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়।
পরে এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। সলিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিনের বাড়িও ভাঙচুর করা হয়।
সলিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জিয়া স্মৃতি সংসদের ব্যানারে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাই। এ সময় ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি জাহিদুল হাসান ও রোকন মেম্বারের নেতৃত্বে আমাদের উপর হামলা চালানো হয়। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সলিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি জাহেদুল হাসান বলেন, আমরা জিয়া স্মৃতি সংসদের ব্যানারে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাই। এই সময় আমাদের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেওয়ার সময় মহিউদ্দিন সমর্থিত নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকে। ওই সময় আমাদের সমর্থিত নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে নিষেধ করলে আমাদের উপর ইটপাটকেল ছুটে মারে। আমাদের ৮ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমিও হামলার শিকার হয়েছি।
ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল রানা বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযোগ নিয়ে এখনো কোন পক্ষের লোকজন আসেনি।
মন্তব্য করুন