উত্তাল যমুনা এখন মরা নদী। কূলে জেগে উঠেছে বিশাল চর। চরের কোথাও সমতল, আবার কোথাও উঁচু-নিচু। কিছু জায়গায় ছোট ছোট গর্ত। সেখানে রয়েছে ছোপ ছোপ জমে থাকা পানি। চরের এসব গর্তে জমে থাকা পানিতে বোরো ধান রোপণকাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এ ধান রোপণে জমিতে কোনো চাষ দিতে হয়নি। এ কারণে উৎপাদন খরচ নেই বল্লেই চলে। আর তাই এ ধান চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চরের কৃষকরা।
রোববার (১৫) ডিসেম্বর সরেজমিন বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বহমান যমুনা নদীর কূলে জেগে ওঠা বালুচরে আগাম জাতের কালো বোরো ধান চাষের এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, শুকনো মৌসুমে এ বছর যমুনা নদীর কূলে জেগে ওঠা চরে বোরো ধান চাষ করেছেন শত শত কৃষক। নদীর কূলে ধানের সবুজ চারাগাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে। প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে যমুনা নদী পানি শূন্য হয়ে যায়। তবে উজান থেকে নেমে আসা সামান্য পানিতেই নদীর কূলের ভূমিহীনরা প্রতি বছর চাষ করেন বোরো ধান। এবারও সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ধান চাষ করেছেন তারা। অধিকাংশ চাষি জেগে ওঠা চরে গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে বোরো ধান চাষ করছেন। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই নদীতে পানি কমে যায়। তখন বালুচরের জায়গা নিজেদের দখলে নিয়ে বোরো চাষের উপযোগী করে তোলার জন্য কাজে নেমে পড়েন চাষিরা।
চর এলাকার বোরো চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজস্ব জমি না থাকায় তারা কোনো ফসলই চাষাবাদ করতে পারেন না। অন্যদিকে সেচ দেওয়া পানির চেয়ে নদীর চুয়ে আসা পানিতে বোরো চাষ অনেক বেশি উপকারী। তাই নদীর কূলে চরের নরম পলিমাটিতে বোরো ধান লাগানো হয়। এতে সার ও সেচসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাশ্রয় হয় চাষিদের। এ জাতের ধানের ফলন প্রতি বিঘায় প্রায় আট-নয় মণ করে পাওয়া যায়।
নভেম্বরের শুরুর দিকে কালো বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেন চরাঞ্চলের চাষিরা। চারাগাছের বয়স ২৫ থেকে ৩০ দিন হলে চাষিরা নদীর কূলে জেগে ওঠা চরে বিনাচাষে সেই চারা রোপণ করেন। এ ধান উৎপাদনে জমিতে হালচাষের প্রয়োজন হয় না, রাসায়নিক সারও তেমন একটা লাগে না। মার্চের শেষের দিকে এ ধানের ফসল ঘরে তোলা হয়।
যমুনার বাঁধে আশ্রিত ভূমিহীন দিনমজুর জাহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে বাস করছেন বাঁধে। নিজের জমি না থাকায় বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে প্রায় এক বিঘা জমিতে কয়েক বছর থেকে বোরো ধান চাষ করে আসছেন। এ জমির ধান থেকেই তার পরিবারের কয়েক মাসের খাবারের জোগান হয়।
ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ছামিদুল ইসলাম জানান, নদীর তীরবর্তী দরিদ্র জনগোষ্ঠী কালো বোরো ধান চাষ করেছেন। আগে এসব বালুচর পতিত থাকত। নদীর এসব পতিত জমিতে বোরো ধান চাষ করে চাষিরা সচ্ছলতা পাচ্ছেন। এদিকে চরের কৃষকদের বোরো ধান চাষে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় সহায়ক ভূমিকা এবং চাষাবাদে ভূমিহীনদের আর্থিক অনটন ঘোচার পাশাপাশি এলাকার খাদ্য চাহিদা পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মন্তব্য করুন