বর্তমান সময়ে মধুর বিলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল চলনবিল। পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের চলনবিল অধ্যুষিত এলাকার মাঠগুলোতে এখন মাঘী সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। হলুদ ফুলে যেন নেচে-নেচে, ছুটে-ছুটে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে বিভিন্ন এলাকা থেকে চলনবিলে আসা খামারিদের মৌমাছি। সরিষাক্ষেতের পাশে খামার স্থাপন করে মধু সংগ্রহের অপেক্ষায় আছেন খামারিরা। শিগগিরই শুরু হবে মধু সংগ্রহের কাজ।
খামারিরা আশা করছেন, এবার চলনবিল এলাকায় ৫০ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
চলনবিল এলাকার কৃষি অফিসগুলোর তথ্যমতে, চলনবিল এলাকার উপজেলাগুলোতে প্রতি বছর প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল বারি-৯, ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ ও বীনা-৪, ১১ সহ স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ হয়। ব্যাপক এলাকাজুড়ে সরিষা চাষ হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার মৌ খামারিরা মধু সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অগ্রহায়নের শেষ ভাগে চলে আসেন চলনবিল এলাকায়।
জানা গেছে, প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের শেষদিকে চলনবিল এলাকার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, তাড়াশ, সিংড়া, উল্লাপাড়ার পশ্চিমাংশসহ এর আশপাশ এলাকার মাঠগুলো ছেয়ে যায় হলুদ সরিষা ফুলে। এ সময় পাবনা নাটোর সিরাজগঞ্জের খামারিদের পাশাপাশি সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, গাজীপুর, রংপুর, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আট শতাধিক মৌ খামারি মধু সংগ্রহের জন্য চলনবিল এলাকার মাঠগুলোতে এসে অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। সরিষাক্ষেতের পাশে মৌবক্স স্থাপন করে কয়েকদিন পরপর মধু সংগ্রহ করেন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার হরিণগর গ্রামের মৌ খামারি জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলনবিল এলাকায় প্রচুর পরিমাণে সরিষা চাষ হওয়ায় প্রতি বছর এ সময় আমরা মধু সংগ্রহের জন্য আসি। চাটমোহর-মান্নাননগর সড়কের নিমাইচড়া এলাকায় রাস্তার পাশে ৩০০টি মৌবক্স স্থাপন করেছি। আশা করছি আগামী সপ্তাহে মধু সংগ্রহ করতে পারব। আমরা সাত থেকে আট দিন পরপর মৌবক্স থেকে মধু সংগ্রহ করি।
তিনি আরও জানান, পুরোনো মধু ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। নতুন মধুর দাম এখনো নির্ধারণ হয়নি। পাইকারদের পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে মধু বিক্রি করেন তারা।
নর্থবেঙ্গল হানি কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলনবিলে প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়। প্রতি বছর আট শতাধিক খামারি চলনবিলের বিভিন্ন মাঠে সরিষার মধু সংগ্রহ করেন। আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে মধুর উৎপাদন। অধিক শীত, কুয়াশা, বৃষ্টি হলে মধুর উৎপাদন কমে যায়।
ধারণা করা হচ্ছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে চলনবিল এলাকায় দুই থেকে আড়াই হাজার টন মধু সংগ্রহ করা যাবে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। চলনবিলের মধু জাতীয় অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেও জানান তিনি।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে কেবল চাটমোহরেই ৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৫ হাজার ৫০০ কৃষককে বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। সরিষাক্ষেতের পাশে মৌবক্স স্থাপন করলে একদিকে যেমন মধু সংগ্রহ করা যায়, তেমনি পরাগায়ন ভালো হওয়ায় সরিষার উৎপাদনও ভালো হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মধু সরিষা দুটিই ভালো হবে। লাভবান হবেন কৃষক ও মৌ খামারিরা।
মন্তব্য করুন