চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার মান থুবড়ে পড়েছে বিভিন্ন কারণে। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর সেবা গ্রহণকারী রোগীর সংখ্যাও কমেছে। দায়িত্বে অবহেলা আর অনেক পদ শূন্য থাকায় ৩১ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতাল এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সরেজমিন দেখা গেছে, আগের মতো রোগীর তেমন ভিড় নেই। জরুরি বিভাগেও কোনো কোলাহল নেই।
জানতে চাইলে কয়েকজন সেবাগ্রহীতা জানান, এই হাসপাতালে এখন আর আগের মতো সেবা পাওয়া যায় না। চিকিৎসকরা যেসব ওষুধ লেখেন, এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ওষুধের সাপ্লাই নেই। ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূর থেকে চিকিৎসা নিতে গিয়ে উল্টো বিপদে পড়তে হয় রোগীদের। তা ছাড়া জরুরি সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকায় সব প্রসূতিকে প্রাইভেট হাসপাতালে নিতে হয়। এতে আর্থিক বিপদে পড়েন নিম্নমধ্যবিত্তরা। এ ছাড়া হাসপাতালে রয়েছে পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাব। তাই এই হাসপাতালে আর আগের মতো রোগী আসেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীতের প্রাদুর্ভাব বাড়ায় মানুষের জ্বরসহ ঠান্ডাজনতি রোগের প্রকোপ বেড়েছে। নিয়মিত এমন রোগী এলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। তা ছাড়া রোগী ভর্তি থাকলে যে খাবার দেওয়া হয়, তাও মানহীন। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ একেবারেই উদাসীন বলে অভিযোগ করেন রোগী ও স্বজনরা।
আরও জানা গেছে, গাইনি চিকিৎসক না থাকায় আট মাস ধরে বন্ধ রয়েছে জরুরি সিজারিয়ান অপারেশন। ফলে অন্তঃসত্ত্বারাও আগের মতো সেবা নিতে আসেন না এখানে। মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল নিয়োগ নেই দীর্ঘদিন ধরে। ফলে অব্যবহৃত চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল হিসেবে চিকিৎসক-সার্জন মিলিয়ে ২৪ জন থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১১ জন। ৩৫ জন নার্সের বিপরীতে আছেন ৩১ জন। স্যাকমো, টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য পদ শূন্য রয়েছে প্রায় ৩৩টি। এদিকে ৭৫ জন স্বাস্থ্য সহকারী থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৪৫ জন। এ ছাড়া জনবল সংকট, অবহেলা, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকাসহ নানা অবহেলায় চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। তার ওপর ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অযথা ভিড়ের কারণে রোগীরা বিরক্ত হয়ে যান। এদিকে নিয়মিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ছেংগারচর পৌরসভা থেকে সেবা নিতে আসা মফিজুল ইসলাম, নারগিস বেগমসহ একাধিক রোগী বলেন, আমাদের যা যা ওষুধ লিখে দিচ্ছে, এর মধ্যে প্যারাসিটামল ছাড়া বাকি সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়। কোনো টেস্ট দিলেও বাইরে থেকে করাতে হয়। তাহলে আর এই হাসপাতালে এসে কী লাভ?
ভর্তি রোগীরা জানান, চিকিৎসকরা যেসব ওষুধ লেখেন, তার ৯০ শতাংশেরই সাপ্লাই নেই। যে খাবার দেয়, এসব খাবার খাওয়ার উপযোগী নয়। এমনভাবে চলতে থাকলে একসময় রোগীশূন্য হয়ে যাবে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এ কে এম আবু সাইদ বলেন, গাইনি চিকিৎসক না থাকায় জরুরি সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখেছি। আর আমাদের চিকিৎসাসেবা ভালোই চলছে। তবে একাধিক পদ শূন্য থাকায় আগের মতো সেবা দিতে পারছি না। রোগীদের খাবারের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি খোঁজখবর নেব এবং ওয়ার্ডে গিয়ে খাবারের মান দেখব। কোনো সমস্যা হলে ব্যবস্থা নেব। জাতীয় পতাকার বিষয়ে তিনি বলেন, পতাকা টানাতে মাঝেমধ্যে ভুল হতে পারে।
মন্তব্য করুন