কৃষিপ্রধান দেশের শস্য ও ধানের রাজ্য হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁ। এ জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষক ও দিনমজুর। এ জনপদে গত দুই-তিন দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে চারপাশ। এ ছাড়া উত্তরের হিমেল হওয়া শীতের সেই তীব্রতাকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আর বৃষ্টির মতো ঝরা শিশিরের সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় ঠান্ডায় জবুথবু এ জেলার মানুষ। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষের জনজীবন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষরা।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। রাস্তাঘাট ছিল প্রায় জনশূন্য। যারা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছেন, তাদের অনেকেই শীতের কারণে বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে যারা ভ্যান, রিকশা, মোটরসাইকেল বা সাইকেলে চলাচল করেন তাদের জন্য কুয়াশা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহর থেকে শুরু করে গ্রাম অঞ্চলের সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। ঘন কুয়াশার কারণে ঘটছে দুর্ঘটনাও। গত দুই দিনে এ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। নওগাঁ সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীদের ভিড়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
সদর উপজেলার শিবপুর ব্রিজ এলাকার রিকশাচালক সাইদুল বলেন, এত বেশি শীত পড়েছে যার কারণে রিকশা চালানো যাচ্ছে না। হাত-পা শিটকা লেগে যাচ্ছে। মানুষ ঘরের বাইরে বের না হওয়ায় ভাড়া কমে গেছে। এতে সংসার চালাতে খুব সমস্যা হচ্ছে।
রাণীনগর উপজেলার কৃষক তুষার বলেন, জমিতে শাক-সবজিসহ আলু ও সরিষা লাগিয়েছি। কুয়াশার কারণে কিছু দেখা যাচ্ছে না। বৃষ্টির মতো পড়ছে শিশির। ঠান্ডার কারণে জমিতে যেতে ভয় লাগছে। এভাবে চলতে থাকলে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সংসারের প্রয়োজনে বাজার করতে এসেছিলেন সুজন। তিনি জানান, হঠাৎ করে এতো কুয়াশা পড়েছে সামনে কিছু দেখা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে বৃষ্টির মতো পড়ছে শিশির। প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হতাম না।
নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান কালবেলাকে জানান, আজ বুধবার জেলায় তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরেই তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে উঠানামা করছে। আগামী দুই-একদিন তাপমাত্রা এরকমই থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন