তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বিপাকে পড়েছে কিশোরগঞ্জ হাওরের কৃষকরা। এখন হাওরে চলছে ইরি-বোরো ধান রোপণের গুরুত্বপূর্ণ সময়। চারদিকে কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশায় ধানের জমিতে কাজ করতে পারছেন না চাষি।সকাল-দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও সূর্যের দেখা মিলছে না। এতে জমিতে কাজের জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) কিশোরগঞ্জ ইটনা উপজেলায় ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিশোরগঞ্জ জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিএম মো. আলতাফ হোসেন বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন।
হাওরে গিয়ে দেখা যায়, ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে পুরো হাওর অঞ্চল। লাইট জ্বালিয়ে অটোরিকশাগুলো চলছে। ঘন কুয়াশা ভেদ করে কৃষকরা ছুটছেন জমিতে। তীব্র কনকনে শীতের প্রকোপে বিপর্যস্ত জনজীবন। এই শীতে বিশেষ করে বেশি অসুস্থ হচ্ছে বাচ্চা এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা। দিন ও রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন শীতার্ত মানুষ। বিকালে শীতের তীব্রতা বেড়ে তা সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে। শীতের কারণে ছিন্নমূল ও দিনমজুররা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছেন। ঘন কুয়াশা, তীব্র শীত ও হিমশীতল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার।
ইটনা সদর ইউনিয়নের পশ্চিম হাওরে কৃষক ফাজিল মিয়া জানান, প্রচুর ঠান্ডা এবং কুয়াশা পড়ছে। এখন তো চিন্তায় আছি বেশি কুয়াশা পড়লে ধানের জমিতে পোকামাকড় আক্রমণ হবে। এ জন্য সকাল সকাল ধানের চারার উপর পড়া কুয়াশার পানিগুলো ফেলতে হচ্ছে।
কৃষি শ্রমিক হামজা হোসেন বলেন, অনেক ঠান্ডা পড়েছে, পানি হিমশীতল হয়ে থাকে, কাজ করতে খুব সমস্যা হয়। হাওরে এখনই যেভাবে ঠান্ডা পড়েছে- এইভাবে চলতে থাকলে ধানের জমির ক্ষতি হবে।
অটোরিকশাচালক ও মোটরসাইকেলচালকরা জানান, ঘন কুয়াশায় বিপাকে পড়েছে অটোরিকশাচালক ও মোটরসাইকেলচালকরা। ঘন কুয়াশা ভেদ করে গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। আগের মতো যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
অটোরিকশা চালক ইদ্রিস আলী বলেন, আমরা গরিব মানুষ গাড়ি চালিয়ে খাই, এখন ঠান্ডার মধ্যে গাড়ি চালাতে কষ্ট হচ্ছে, আবার যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার যদি ড্রাইভারদের কিছু শীতের কম্বল দিত তাহলে উপকার হতো।
মোটরসাইকেল চালক হাবিব মিয়া বলেন, সকাল থেকে বসে আছি কোনো যাত্রী আসেনি। ঠান্ডার মধ্যে গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়, এত কুয়াশা পড়ছে যে লাইট জ্বালিয়েও সামনে কিছু দেখা যায় না। হঠাৎ করেই শীতের ঠান্ডা পড়েছে, যা আমাদের জন্য কষ্টকর।
ইটনা বড় বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাসেল মিয়া বলেন, ঘনকুয়াশা আর শীতের তাপমাত্রা অনেক। এই শীত গরিব অসহায় মানুষের জন্য কষ্টকর। সরকারিভাবে গরিব অসহায় মানুষের মাঝে বিনামূল্যে শীতের কম্বল বিতরণ করা খুব জরুরি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ উজ্জ্বল শাহা কালবেলাকে জানান, হাওরে চলছে ইরি-বোরো ধানের জমি তৈরির প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে শতভাগ ইরি-বোরো ধানের বীজতলা সম্পন্ন হয়েছে। যদি এমনভাবে তাপমাত্রা নিচে নেমে আসে তাহলে ধানের চারায় সমস্যা হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি জানান, হাওরে দিন দিনই তাপমাত্রা নিচে নামছে। আমাদের কৃষি উপসহকারীদের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি এত ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডার মধ্যে জমিতে ধানের বীজ বপন না করার জন্য এবং ধানের বীজতলায় ৩-৫ ইঞ্চি পানি ধরে রাখার জন্য। সম্ভব হলে বীজতলা স্বচ্ছ সাদা পলিথিন দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে রাখার জন্য। এছাড়াও যদি দেখা যায় বোরো ধানের বীজতলা হলুদ হয়ে যাচ্ছে শতাংশপ্রতি ২৫০-৩০০ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করবে।
চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ২৭ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত মৌসুমে ছিল ২৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর।
কিশোরগঞ্জ জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিএম মো. আলতাফ হোসেন কালবেলাকে জানান, মঙ্গলবার হাওর অঞ্চলে তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ বুধবার হাওর অঞ্চলে ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই তাপমাত্রা কমছে।
মন্তব্য করুন