দক্ষিণাঞ্চলের ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকলটি (মোচিক) এখন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মোবারকগঞ্জ চিনিকলে ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুমে অবৈধভাবে ১৩৭ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীকে দৈনিক হাজিরায় কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম ও আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আনারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গোলাম রসুল প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে অনভিজ্ঞ এসব দলীয় ক্যাডারকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেন। তবে এসব শ্রমিক-কর্মচারীর কোনো নিয়োগপত্র নেই বলে অভিযোগ আছে।
এদিকে টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে নিয়োগকৃত শ্রমিকদের ফের কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মিলটির এমডি সাইফুল ইসলাম। এ নিয়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে মোবারকগঞ্জ চিনিকল এলাকায়।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৩-২৪ আখ মাড়াই মৌসুমে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে মিলটির বিভিন্ন বিভাগে ১৩৭ কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার, মিলের এমডি সাইফুল আলম ও মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুল মাথাপ্রতি চার লাখ টাকা করে নিয়ে তাদের তালিকা চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছে দেন। এসব শ্রমিকের মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল হোসেন, সহসভাপতি মিরাজুল ইসলাম, কালীগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর সজলসহ বেশিরভাগই ছাত্রলীগ-যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলে আত্মগোপনে চলে যান শ্রমিক ইউনিয়নের দুর্নীতিবাজ সভাপতি গোলাম রসুলসহ অবৈধভাবে নিয়োগকৃত অনেক কর্মচারী। এ অবস্থায় ১৩ ডিসেম্বর মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আখ মাড়াই মৌসুম উদ্বোধনের আগেই জনবল সংকটের কথা বলে পলাতক যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাজে নেওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছেন মোচিকের এমডি সাইফুল ইসলাম।
গত সোমবার এসব কর্মচারী ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চাপ দিয়ে কাজে যোগদানের চেষ্টা করলে সাধারণ শ্রমিকরা এর বিরোধিতা করে তাদের ধাওয়া করেন। খবর পেয়ে যৌথবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মিলটির সাধারণ শ্রমিক ইলিয়াস রহমান মিঠু জানান, বিগত সরকারের সময়ে অবৈধভাবে ১৩৭ শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই সময় এসব শ্রমিকের ন্যূনতম সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়নি। সাবেক এমপি আনার ও তার বন্ধু গোলাম রসুল টাকার বিনিময়ে এসব শ্রমিককে নিয়োগ দেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। আর এই অনৈতিক কাজে সহায়তা করেন মিলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম।
শ্রমিক জবেদ আলী জানান, গত মৌসুমে নিয়োগ পাওয়া ১৩৭ জনের মধ্যে বেশিরভাগই ছাত্রলীগ-যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের আবারও কাজে লাগাতে চাইলে সাধারণ শ্রমিকরা তাদের প্রতিহত করবে। ফলে এ ঘটনা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।
এ ব্যাপারে সুগার মিলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম কালবেলাকে বলেন, টাকা নিয়ে শ্রমিক নিয়োগ করার বিষয়টি সঠিক নয়। যে ১৩৭ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, সেটি দৈনিক হাজিরায়। তাদের কোনো নিয়োগপত্র নেই। তাদের ফের নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তারা মিলের মধ্যে কাজের দাবিতে জড়ো হচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি।
মন্তব্য করুন