বান্দরবানের থানচিতে দুর্গম রেমাক্রী ইউনিয়নের প্রুসামং পাড়া বাসিন্দা মারমা জনগোষ্ঠীর নারী খ্যাই উ প্রু মারমা পেলেন এবারের জয়িতা পুরস্কার। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে থানচি উপজেলা কনফারেন্স হলে রোকেয়া দিবসে তাকে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সফল জননী হিসেবে দেওয়া হয় এ পুরস্কার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রাকিব হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে তার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অতিথিরা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- থানচি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সেলিন ভূঁইয়া, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা সাইফুল রহমান, প্রেস ক্লাবে সভাপতি অনুপম মারমা ও সাধারণ সম্পাদক চহ্লামং মারমা প্রমুখ।
জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় উপজেলা প্রশাসন ও মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ সময় উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও নারী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
পুরস্কার নিতে আসা তার স্বজনদের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৭০ সালের ২৪ ডিসেম্বর এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন খ্যাই উ প্রু মারমা। মৃত ওয়াং মা সাং মারমার প্রথম মেয়ে তিনি। জন্মের পর থেকে পরিবারের অভাব যেন তার পিছু ছাড়ছে না। মা-বাবার অভাব-অনটনের সংসারে ১৯৯০ সালে বিয়ে করেন একই ইউনিয়নের বাসিন্দা মংএনু মারমাকে। কিন্তু বিয়ের পরও খ্যা উ প্রু মারমার সংসারেও অভাব-অনটন। সেই দুঃখ-দুর্দশাকে পাশে রেখে স্বামীর সঙ্গে যোগ দেন কৃষিকাজে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় জুমচাষ ছাড়া খ্যাই উ প্রু মারমার আয়ের কোনো উৎস্য ছিল না। এক সময় এক ছেলে ও তিন মেয়ে সন্তানের জননী হন তিনি। সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া আরও কঠিন হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে স্বামীর সঙ্গে জুমের ফসল বিক্রির কাজে লেগে সংসারের হাল ধরেন তিনি। অপ্রতিরোধ্য খ্যাই উ প্রু মারমা একে একে শিক্ষিত করে তোলেন তার চার সন্তানকে। সবাই এখন বিভিন্ন পদে সরকারি চাকরি করেন। সমাজের হাসিমাখা মুখ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত তিনি।
মঞ্চে পুরস্কার গ্রহণ শেষে খ্যা উ প্রু মারমা উদ্দীপ্ত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, অগ্রযাত্রায় আমি এখন সফল মা। আমার বড় মেয়ে স্নাতক শেষ করে বান্দরবানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে একজন অফিস সহকারী; একমাত্র ছেলে এখন স্নাতক শেষ করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর; মেজো মেয়ে স্নাতক শেষ করে বান্দরবান পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে আছে; ছোট মেয়ে অনার্স শেষ করে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত আছে। বর্তমানে অন্যান্য সময়ের তুলনায় আমার পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতাও ফিরে এসেছে।
থানচি সদর ইউনিয়নের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বকুলি মার্মা বলেন, খ্যা উ প্রু মারমা সমাজের দৃষ্টান্ত। অনেক পরিশ্রম করে চার সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। জীবনের অনেক বাঁক বদলে তাকে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।
উপজেলার ছোট মদক থেকে আসা মাহেনু মার্মা বলেন, তাকে (খ্যাই উ প্রু মারমা) দেখে অবাক হলাম। জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। সরকার তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে দেখে ভালো লাগছে।
এ সময় উপজেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে সম্মাননাস্বরূপ তেরেজা ত্রিপুরাকেও জয়িতা পুরস্কার দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন