মাঠের পর মাঠে সারি সারি ফুলের বাগান। কোথাও গোলাপ, গাঁদা, কোথাওবা অর্কিড, পাতাবাহার, রজনীগন্ধার ঝোপ। বলছি যশোরের ঝিকরগাছার গদখালীর কথা। এ অঞ্চলে বছরজুড়ে ফুলচাষ হলেও ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলই মূল মৌসুম।
বিজয় দিবস, ইংরেজি নববর্ষ, বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা নববর্ষ এ পাঁচ মাস ফুলের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। আর এসব দিবস সামনে রেখেই ফুলের আবাদ করেন গদখালীর চাষিরা।
এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি বছরে অতি তাপমাত্রা আর অতিবৃষ্টির ধকল কাটিয়ে চাষিরা শতকোটি টাকার ফুল বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন। দেশের মোট চাহিদার অন্তত ৭০ শতাংশ ফুল সরবরাহ করেন যশোরের গদখালী, পানিসারা, হাঁড়িয়া অঞ্চলের ফুলচাষিরা।
এবার মৌসুমের শুরুতেই বাড়তে শুরু করেছে ফুলের দাম। গতকাল সোমবার ভোরেই চাষিরা ফুল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন গদখালী বাজারে। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরব ছিল পাইকারি ফুলবাজার। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুধারে বিভিন্ন জাতের ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন কৃষক। ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল বা ঝুড়িতে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দরকষাকষি করছিলেন তারা।
এদিন বাজারে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয় ৪-৫ টাকায়। প্রতি পিস রজনীগন্ধার দাম ছিল ৬ টাকা। রঙিন গ্লাডিওলাস প্রতিটি মানভেদে বিক্রি হয়েছে ১২-১৫, জারবেরা ১২-১৪ টাকায়। ফুল বাঁধাই হয় কামিনীর পাতায়। এই পাতার প্রতি আঁটির দাম ছিল ৫০ টাকা, আর জিপসির আঁটি ১০০ টাকা। মালা গাঁথার জন্য প্রতি ১০০ পিস চন্দ্রমল্লিকা ও প্রতি হাজার গাঁদা বিক্রি হয়েছে ৩০০-৪০০ টাকায়।
চলতি বছরের গ্রীষ্মে বেশ কয়েকবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে যশোরে। বর্ষাজুড়ে ছিল অতিবৃষ্টির দাপট। এমন বৈরী আবহাওয়ায় বেশ লোকসানে পড়তে হয় গদখালী ও এর আশপাশের ফুলচাষিদের। সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তারা এখন ফুলবাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ফুল চাষিরা জানান, গদখালী অঞ্চলের ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ১১ ধরনের ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। এই এলাকার ৬ হাজার পরিবারের দেড় লাখ মানুষ ফুলচাষের সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছর উৎপাদন হয় ৩৫০ কোটি টাকার ফুল। বছরের অন্য সময় ফুলের দাম পাওয়া গেলেও বর্ষাকালে তেমন চাহিদা থাকে না। তাই সে সময়ে চাষিরা গোখাদ্য হিসেবে ফুল ব্যবহার করেন।
পটুয়াপাড়া গ্রামের ছন্নত আলী এবার দুই বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এ বছর অসময়ে বর্ষা হয়েছে। এখন বাড়তি পরিচর্যা করছি। সামনের অনুষ্ঠানে দাম ভালো পেলে লাভ হবে। চাষি সোহাগ হোসেন বলেন, দেড় বিঘা জমিতে রঙিন গ্লাডিওলাস চাষ করেছি। বৃষ্টিতে অনেক গাছ মারা গেছে। প্রতি বিঘায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। দাম ভালো না পেলে আমাদের ক্ষতি হয়ে যাবে।
আরেক চাষি সিয়াম হোসেন বলেন, এখন সেচ দিতে হবে। বাজার ভালো হলে এ বছর অনেক লাভ হবে। জারবেরা চাষি মঞ্জুরুল আলম বলেন, দুই বিঘা জমিতে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর সাত থেকে আট লাখ টাকার জারবেরা ফুল বিক্রির আশা করছি।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, এ বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পর অসময়ের বৃষ্টিতে ফুলচাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে উৎসবের মৌসুম শুরু হয়েছে। সব ঠিক থাকলে এই অঞ্চল থেকে এবার শতকোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।
মন্তব্য করুন